পানির চাহিদার সাথে বেড়েছে কাজের গতি

33

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ের মধ্যেও উৎপাদন ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানটি দুর্যোগের এই সময় বাড়তি চাহিদা পূরণে নানা পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছে। এই কঠিন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশল বিভাগের ৫০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। বাড়তি কোনো সুবিধা না পেলেও জাতীয় স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশল বিভাগের সবাই।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, করোনার মধ্যে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে আমাদের ৫০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। প্লান্টের লোকজন সেখানে কোয়ারিন্টিনে আছেন। তাদের জন্য সেখানে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে মড অফিসগুলো কাজ করছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় সবাই কাজ করে যাচ্ছে। আগের তুলনায় এখন সবার কাজ আরো বেড়ে গেছে।
করোনার সময়ে কোন কাজগুলো প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, এই সময়ে সবার পানি পাওয়া নিশ্চিত করাটাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। গেটবাল্বগুলো নিয়ন্ত্রণ করা, কোথাও ফুটো হলে সাথে সাথে সারিয়ে নেয়া, অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানে জোর দেয়া হচ্ছে। আমাদের পুরো টিম দিনেরাতে সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগের অধীনে তিনটি পানি শোধনাগার প্রকল্পের মধ্যে নিয়োজিত ১৫৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাখা হয়েছে কোয়ারিন্টিনে। সেখানে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানির উৎপাদন ধরে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অন্যদিকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে কাজ করে যাচ্ছে ওয়াসার চারটি মড অফিস। পুরো শহরের মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে মডঅফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিয়োজিত আছেন কাজে। এমনকি রাতের বেলাতেও কাজ করে যাচ্ছেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা। অবশ্য ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সচিব ছাড়াও রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাও করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রেখেছে।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ওয়াসার সার্ভিস ইমারজেন্সি সার্ভিস। এখানে ছুটির সুযোগ নেই। আমাদের প্লান্টের মধ্যে যারা আছে সবাই সেখানে থাকছেন। তাদের থাকার-খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেনারেটরগুলো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত তেল মজুদ রাখা হয়েছে। শহরের মধ্যে কোথাও সমস্যা হলে সাথে সাথে সেটা সমাধানের ব্যবস্থা রাখা আছে।
তিনি বলেন, বাড়তি কাজের জন্য কোনো ধরনের ভাতা বা প্রণোদনার কোনো সুযোগ নেই। সরকারিভাবে যদি কোনো সুযোগ দেয়ার ঘোষণা আসে তখন সেটা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ মুহুর্তে জাতীয় স্বার্থে সবায় কাজে নিয়োজিত আছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭৬ হাজার। যার মধ্যে দশ হাজার বাণিজ্যিক, বাকি ৬৭ হাজার আবাসিক। সব মিলিয়ে ওয়াসার পানির চাহিদা থাকে দৈনিক ৪২ কোটি লিটার। যার মধ্যে ওয়াসা সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি লিটার পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে। করোনা পরিস্থিতি আরো সাত কোটি লিটার পানির চাহিদা বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াসা বন্ধ করে দেওয়া ২০টি ডিপটিউবওয়েল চালু করে এক কোটি লিটার পানির উৎপাদন বাড়িয়েছে। এ অবস্থায় যে এলাকায় পানির চাপ বেশি সেখান থেকে চাপ কমিয়ে অন্যান্য এলাকায় দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন ও প্রকৌশল) গোলাম হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের কর্মীরা নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় স্বার্থে সবায় নিজ নিজ কাজে মনোযোগী হয়েছেন। দিনে রাতে কাজ করে গেলেও তাদের কোনো ভাতার সুযোগ নেই। এটা নিয়ে কি করা যায় সেটা আমরা মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করছি।