নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব। গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে এ উৎসব শুরু হয়। ১৩৫ জন শিল্পীর সমন্বয়ে জাতীয় সংগীত ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের পর্দা উঠে। সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন। এতে শ্রেণি বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে ড. অনুপম সেন বলেন, গণসংগীত মানুষকে জাগায়।অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, শ্রেণীসংগ্রামের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলে। গণসংগীত বিশ্বের শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বিদেশের মাটিতে যখন দেশ নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছিল, তখন গানের কনসার্টগুলো মানুষকে যুদ্ধে যাওয়ার প্রেরণা জাগিয়ে ছিল। আমাদের আবার জাগতে হবে। দুর্নীতি মুক্ত, শ্রেণি বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে হবে।
গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও উৎসব কমিটির আহব্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ। আলোচক ছিলেন জোট ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ, উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহব্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী মানজার চৌধুরী সুইট, উৎসবের যুগ্ম সমন্বয়কারী শিল্পী শ্রেয়সী রায় ও চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার।
উৎসব উদযাপন কমিটির আহব্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সমাজ যখন ভালো থাকে না, অপশক্তির দ্বারা দেশ আক্রান্ত হয় তখন শক্তি যোগায় গণসংগীত। এখনো নবর্বষ পালনে বাধা আসে, সবধর্মের অধিকার নিশ্চিত হয়নি। দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট বেড়েছে। এসব জনবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন। এ জাগরণের অন্যতম প্রাণশক্তি গণসংগীত।
উদ্বোধনের পর সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু। বিকেলে দলীয় সঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করেন খুলনার বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, আব্দুল লতিফের গান পরিবেশন করেন দিনাজপুরের দল ভৈরবী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান পরিবেশন করেন রাজশাহীর দল জয়বাংলা, বর্ণবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করেন বরগুনার দল মাটিয়াল, সা¤প্রদায়িকতা বিরোধী গান পরিবেশন করেন নোয়াখালীর দল বিশ্বভ‚বন, ফকির আলমগীরের গান পরিবেশন করেন ঢাকার দল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, ভ‚পেন হাজারিকার গান পরিবেশন করেন ঢাকার দল উঠোন, শ্রেণি-সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের দল সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং অজিত রায়ের গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন। একক সংগীত পরিবেশন করেন রংপুুরের শিল্পী রূপু মজুমদার, ঠাকুরগাঁও এর জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, ঢাকার ফকির সিরাজ, কাজী মিজানুর রহমান, আরি রহমান ও প্রলয় সাহা এবং চট্টগ্রামের ফারহানা রহমান কান্তা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের ওরিয়েন্টাল স্কুল অব ডান্স।
উৎসবের দ্বিতীয়দিন আজ সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারে ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক। সন্ধ্যায় থাকছে দলীয় সংগীত, একক গান এবং দলীয় নৃত্য।