পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মহানবীর (দ.) শান্তি ও স¤প্রীতির আদর্শে উজ্জীবিত হোক অশান্ত বিশ্ব

5

আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। ইসলামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এদিনটির রয়েছে আলাদা মাধুর্য, পবিত্রতা ও গাম্ভীর্য। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আওয়াল মাসের এ দিনে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (দ.) জন্মগ্রহণ করেন। মক্কার জমিনে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের হাশেমিয় শাখায় আবদুল্লাহর ঔরশে মা আমিনার গর্ভে তিনি এ পৃথিবীতে আগমন করেন। পৃথিবীবাসীর জন্য দয়া, মানবতা, শান্তি, সাম্য, সৌহার্দ্য, স¤প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক চিরন্তন বিধান নিয়ে মহানবী পৃথিবীতে আসেন। মহান আল্লাহ প্রদত্ত বহুমুখী গুণ আর ঐশী জ্ঞান দিয়ে তিনি দুনিয়াবাসীকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। সকল পাপাচার, ব্যভিচার, বাতুলতা ও অসত্যের মূলোৎপাঠন করেন। নবুয়াতের প্রকাশের পূর্ব থেকে জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত মহানবীর সাধনা ছিল মানবতার কল্যাণ। যেজন্য তাঁকে পবিত্র কুরআনে রাহমাতুল্লিল আলামিনও বলা হয়েছে। তিনি নিজ ধর্ম নয় শুধু, পৃথিবীর তাবৎ ধর্মাবলম্বীর কাছে সর্বশেষ নবী হিসাবে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কাছে ধর্মের বিধান যেমন গুরুত্ব এবং আবশ্যকীয় ছিল, তেমনি অন্য ধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও সমীহ ছিল অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত। পবিত্র মসজিদে নববীর এক কোণায় একদল খ্রিস্টানকে তিনি যেমন তাদের উপসনা করার সুযোগ দিয়েছিলে, অনুরূপ একদল ইহুদীকে মসজিদে নববীতে রাত কাটানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। এসময ইহুদীদের একসদস্য মসজিদে মলমূত্র ত্যাগ করে রাতে পলায়নের পরও নবীজি তাদের ডেকে এনে ক্ষমা ও আতিথিয়েতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়া মদিনার সনদ, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয় থেকে শুরু করে সকল যুদ্ধ বিগ্রহে অমুসলিমদের প্রতি, তাদের নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি যে মানবিক আচরণের শিক্ষা দিয়েছিলেন তা আজও বিরল উদহারণ। মহানবীর এসব উদহারণ ইসলামকে বিশ্ববাসী সহজেই গ্রহণ করেছিল। স্বল্পসময়ে পুরো বিশ্ব ইসলামের করতলে এসেছিল। আজ দুঃখ ও লজ্জার সাথে আমাদের বলতে হয়, নবীজির আদর্শ ও শিক্ষা থেকে মুসলমানরা আজ মারাত্মকভাবে বিচ্যুত হচ্ছে। কথায় কথায় ধর্মের দোহায় দিয়ে স¤প্রীতি, শান্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ মুসলমানদের কাছে নতুন সময় ও দিনের শুভাগমণ ঘটেছে। আজকের এ দিনে ইতিহাসের পাতায় আরো একবার চোখ বুলাতে হবে, দেখতে হবে মুসমলমানদের গৌরবজনক অধ্যায়, সোনালী দিনগুলো।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ। ঐতিহাসিকভাবে মহানবীর বংশধর ও সুফিসাধকদের মাধ্যমে এদেশের মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। ফলে এদেশের সিংহভাগ মানুষ সুন্নি মুসলমান। যাদের কাছে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব অন্যন্য যেকোন ধর্মীয় দিবস থেকে বেশি তাৎপর্যবহ। ফলে মহানবীর আগমন দিবস ১২ রবিউল আউয়াল আসলেই ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান মহানবীর প্রতি ভালোবাসার সবটুকু উজার করেন। মিলাদুন্নবী মাহফিলসহ আলোচনা সভা, হামদ-নাত, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত, ফাতেহা ইত্যাদির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেন। এবার তার ব্যত্যয় ঘটবে না। নানা আয়োজনে এ দিবসটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর (দ.) চরিত্রে বিশ্বমানবতার উত্তম আদর্শ সর্বজন স্বীকৃত। আজকের দিনে বর্তমান অশান্ত বিশ্বে পারমানবিক যুদ্ধ এড়াতে মহানবীর উত্তম আদর্শই প্রধান রক্ষা কবজ। বিশ্ব হতে মানবতা বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের বিলুপ্তি ঘটুক একামনা মুসলিম জাতিসহ সকল মানুষের।
মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তি জীবনে হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর মতো আদর্শজন পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যায় না। উক্ত আদর্শ এবং অনুরণীয় চরিত্রের অধিকারী প্রিয়নবীর কথা, কাজ এবং স্বীকৃতি মুসলমানদের জন্য সুন্নত হিসেবে পরিগণিত। একজন মুসলমানকে উত্তম হিসেবে পরিচয় দিতে হলে নবীর যাবতীয় কর্মকাÐ মেনে চলতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বল আলামিন, আল্লাহর ফেরেস্তারা মহানবীর উপর দরুদ পাঠ করেন মহানবীর নামে। উচ্চারিত হবার সাথে সাথে মুসলমানদের দরদ পাঠ ওয়াজিব। পাঁচওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মহানবীর দরদ পাঠ বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক মুসলমানকে নিজের জীবন, ধনদৌলত, মা-বাবা, সন্তান-সন্ততির চেয়ে মহানবীকে অধিক ভালোবাসতে হবে। নবীর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা হলো আল্লাহর কোরআন নির্দেশিত আদেশ-নিষেধ মেনে চলে মহানবীর আচরিত বিষয়গুলোকে জীবনে বাস্তব রূপদান করা। অন্তরের ভালোাবাসা এবং বাস্তবে তার প্রকাশই প্রকৃত নবী প্রেমিকের পরিচায়ক। ইসলামের আদর্শের বাস্তবরূপ দিয়েছেন মহানবী (দ.)। তাঁর সুন্নতসমূহকে জীবনে বাস্তবায়িত করে একজন মুসলমান প্রকৃত নবীপ্রেমিক ও প্রকৃত সুন্নি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবেন। এদেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রকৃত নবীপ্রেম তৈরি হোক এবং ইসলামের প্রকৃত অসা¤প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটুক -এ আমাদের প্রত্যাশা।