নানা সমস্যায় জর্জরিত আজিমনগর আহমদিয়া-রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়

91

সীমানাপ্রাচীর নেই। টিনের ছাউনি, স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে ছোট-বড় গর্ত। অনেক কক্ষে দরজা-জানালা নেই। বেড়া আর টিনশেডের কোথাও বেড়া ভাঙা, কোথাও টিন নেই। এবড়ো তেবড়ো ঘরের টিনগুলো। শ্রেণিকক্ষে আসবাব বলতে কিছু বেঞ্চ, কয়েকটি টেবিল ও চেয়ার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফটিকছড়ি উপজেলার আজিমনগর আহমদিয়া-রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। জানা যায়, এ বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী শুরু থেকে নাম মাত্র বেতনে পাঠদান করে আসছেন। উপজেলার মধ্যে ভালো ফলাফল অর্জনকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলো কয়েকটির মধ্যে এটি একটি। সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে উপজেলার আজিমনগর গ্রামে ১৯৯৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ছয় কক্ষের বেড়া-টিনশেড়ের বিদ্যালয়টি চালু হয়। যেটি বর্তমানে ভেঙ্গে সেখানে তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি এটি জুনিয়র বিদ্যালয় হিসেবে পাঠদানের অনুমতি এবং ২০০৪ সালের ১ মে বিদ্যালয়টি এমপিও লাভ করে। ৮৭ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এটির প্রধান পৃষ্টপোষক সাবেক সাংসদ মরহুম রফিকুল আনোয়ার। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ১৪ জন শিক্ষক কর্মচারী ৫৬০ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। তন্মধ্যে ৬ জন শিক্ষক কর্মচারীই বিদ্যালয়ের নামমাত্র বেতনে। বিদ্যালয়টির ফলাফল উপজেলার মধ্যে বরাবরই ভালো। চলতি বছর জেএসসিতে পাসের হার ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে এ বিদ্যালয় থেকে এ+ পেয়েছেন সৈয়দা মেহেরিন নিঝুম। তিনি বলেন, স্যাররা অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়ান। তাদের দিকনিদের্শনায় আমরা ফলাফলও ভালো করেছি। ভবিষ্যতেও ভাল করবো। দশম শ্রেণির ছাত্রী নাভিলা আকতার বলেন, টিনশেড ঘরে প্রচন্ড গরমে ক্লাস করতে খুবই কষ্ট হয়, তারপরও স্যারদের আন্তরিকতার কারণে আমরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকি না। মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির সময় বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণতার ফলে ক্লাসে পানি পড়ে বই-খাতা নষ্ট হয়। তার পরও শিক্ষকরা আমাদের ছেলের মত সোহাগ দিয়ে পড়ান। তাদের তদারক আমাদের জীবনের গতি পরিবত নে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে নামমাত্র বেতনের চাকরী করছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষক-কর্মচারী সকলের বেতনের ব্যবস্থা করা গেলে আরও ভালো করত। তিনি বিদ্যালয়ের মায়া এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই বিদ্যালয়ের চাকরী করছেন বলে জানান। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মুহাম্মদ শামীমুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে ভাল ফলাফল অর্জনকারীর একটি। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে বিদ্যালয়ে পড়েন। তাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে আরো একটি নতুন ভবন নির্মান করা জরুরি। এটি হলে বিদ্যালয়ের সমস্যা দূর হবে। রোসাংগিরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম সোয়েব আল ছালেহীন বলেন, এ বিদ্যালয়ের অর্ধেক শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা পায় না। সাংসারিক অভাব-অনটন নিয়েই তারা জ্ঞানের আলো ছড়ানোর মহৎ কাজ করেন। তিনি বলেন, অনেক সমস্যার মধ্যেও বিদ্যালয়টির ফলাফল ভাল। আর যাদের পরিশ্রমে এই ভাল, সেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করলে নিজেদের খুব খারাপ লাগে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সমস্যার শেষ নেই। জরুরিভিত্তিতে আরো একটি ভবন এবং কিছু আসবাবপত্র দরকার। এখানকার অর্ধেক শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে নামমাত্র বেতনে শ্রম দিয়ে আসছেন।
তারা প্রতিষ্ঠানটিকে আঁকড়ে ধরে আছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি চিকিৎসক সাহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকারের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ গত এক বছর আগে ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবনের কাজ শেষ করেছে। আরো একটি নতুন ভবন দরকার। নতুন ভবন নির্মিত হলে বিদ্যালয়ের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের ত্যাগের কারণে প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার মধ্যে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সম্ভব সব সহযোগীতা করা হবে।