নগরে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে প্রতিরোধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে

17

চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করে বেড়েগেছে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ। বিশেষ করে নগরীর উপকূলীয় এলাকা এবং নি¤œাঞ্চলের লোকজন এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বয়সী ১২৪ জন রোগী ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ফ্রি পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা, হালিশহর ও উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্ত ২০ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এদের মধ্যে সাতজনের নমুনায় কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। যেখানে সম্প্রতি ব্যাপক জোয়ারের পানিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে গত দুইদিনে। নগরীতে কলেরার জীবাণুর সন্ধান পাওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (আইইডিসিআর) চিঠি পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফ্রি পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা, হালিশহর ও উত্তর আগ্রাবাদ এলাকা থেকে গত ১৫ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট সকাল পর্যন্ত ৬৯ জন এবং মঙ্গলবার থেকে গত ১৭ আগস্ট বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর সর্বশেষ তথ্য মতে, গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিআইটিআইডিতে ৯৫ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকিরা চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে গেছেন। পূর্বদেশ প্রতিনিধি নগরীতে হঠাৎ ডায়রিয়া ও কলেরা বৃদ্ধির বিষয়ে বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশীদের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন- হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে সব বয়সের রোগী রয়েছে। তবে এদের মধ্যে মাঝবয়সী ও পুরুষের সংখ্যা বেশি। একই পরিবারের একাধিক সদস্যও আছেন। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠি। যাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। অপরদিকে মঙ্গলবার আক্রান্ত রোগীদের দেখতে বিআইটিআইডিতে পরিদর্শনে যান সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী ওয়াসার সরবরাহ করা পানি না ফুটিয়ে পান করার কথা জানিয়েছেন। তাদের পায়খানা ও বমি হচ্ছে। দুয়েকজনের জ্বর আছে। যাদের জ্বর আছে, তাদের ম্যালেরিয়া পরীক্ষাও করানো হয়েছে। সিভিল সার্জন বলেন, যেসব এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন, সেখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে। প্রায় সময় এসব এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। গত সপ্তাহে এসব এলাকায় জোয়ারে নালা-নর্দমা, স্যুয়ারেজ লাইন ও সেফটি ট্যাংক সয়লাব হয়ে যায়। এসব এলাকার জনগোষ্ঠি ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, নগরীর বিষয়গুলো সিটি কর্পোরেশন দেখাশোনা করে, তাই আমরা তাদেরকে অবহিত করেছি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জানানো হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় চসিকের টিম পরিদর্শন করেছে। জলাবদ্ধতার কারণে হয়তো ওয়াসার পাইপলাইনে দূষিত পানি ঢুকতে পারে। তবে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। সিভিল সার্জন ও ওয়াসার সাথে কথা বলে আমরা বিষয়টি নিয়ে এগোব। আমরা জানি, আগস্টের শুরু থেকে সাগরে গভীর নি¤œ চাপের খবর দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। এরফলে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের উপকূলীয এলাকায় ৩নং সতর্কতা সংকেতসহ বৃষ্টি ও জলোচ্ছ¡াসের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। তবে নি¤œচাপটি গত ৯ আগস্ট থেকে সুস্পষ্ট লঘু চাপে পরিণত হওয়ার পর উপকুলীয় এলাকাসহ চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এবারের নি¤œচাপে কক্সবাজার সৈকতে তীব্র জোয়ারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ব্যাপক এলাকা সমুদ্র জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রামে চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পতেঙ্গা, বন্দর, হালিশহরের ব্যাপক এলাকায় জোয়ারের পানিতে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এরফলে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতিসহ সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে লবনাক্ততা, স্যানিটেশন, ওয়াসার পাইপ লাইন কিংবা টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় লাইনের পানি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমরা অতীতে ডায়রিয়ার প্রকোপের কথা শুনে আসলেও জীবাণুতে কলেরা পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি করেরার মত রোগের প্রাদুর্ভাব নগরবাসীকে সঙ্কিত করে তুলবে। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন আন্তরিকভাবে কাজ করলে এরোগের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে তাদের গভীর মনোযোগসহ কার্যকর উদ্যোগ নেবেন বলে আমরা আশা করি।