নগরজুড়ে বেহাল সড়ক জনদুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

43

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের কপালে উন্নয়ন বিড়ম্বনার মন্দতার দিন আর শেষ হলোনা! চট্টগ্রামের লাইফলাইন খ্যাত এক পিসি রোডেই চট্টগ্রামে দুঃখ বলে পরিচিত চাকতাই খালের দুঃখ ভুলতে বসেছে নগরবাসী। যদিও চাকতাই খালের দুঃখ এখনও চট্টগ্রামবাসীর কপাল ছাড়েনি, কিন্তু নতুন করে পিসি রোডই (পোর্ট কানেক্টিং রোড) চট্টগ্রামবাসীর দুঃখ বলে স্থান করে নিয়েছে। সদ্য বিদায়ী মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন দীর্ঘ ৪ বছরের অধিক চেষ্টার শেষটা করেও এ রোডটির কাজ শেষ করতে পারেননি। এবার নব নিযুক্ত প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন প্রথম দিন থেকে এ রোডের পেছনে ছুটেছে-সর্বশেষ রফা হলেই চট্টগ্রামবাসী বাঁচবে! কিন্তু এ রোডের বাইরেও আরো বহু সড়ক আছে যেখানে গাড়ির চাকা আর মানুষের পদযুগল দুইটিই চলাচল প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে এ বর্ষা মৌসুমে। প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাইপাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক খানাখন্দ। কোথাও বড় বড় গর্ত। খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় জনদুর্ভোগের বিষয়টি স্থানীয ও জাতীয় গণমাধ্যমসমূহে বারবার আসছে। উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, নগর সেবা সংস্থা সমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে সড়কের এই হাল তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই নগরীর খানাখন্দে ভরা বেহাল সড়ক সংস্কারের কথা বলেছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। আশার কথা, পোর্ট কানেক্টিং রোড, মাঝিরঘাট সড়ক, বহদ্দারহাট সড়কসহ কয়েকটি সড়ক দ্রæততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে জনদুর্ভোগ নিরসনের উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি। নবনিযুক্ত চসিক প্রশাসক প্রতিদিন রাস্তায় নামছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনা। কিন্তু প্রধান এ সড়কগুলোর বাইরে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল অবস্থা। তার ১৮০দিনের স্বল্প মেয়াদে কতটুকু সংস্কারে বা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের কাজ তিনি এগিয়ে নিতে পারবেন সেটা দেখার বিষয়। সিটি কর্পোরেশন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সড়কে চলছে উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ কাজ। কয়েকটি সড়কে বছরের পর বছর ধরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে সাড়ে ১২শ কিলোমিটার পাকা সড়কের বিরাট অংশ এখন বেহাল। প্রায় পাঁচ বছর ধরে নগরীর পোর্ট কানেকর্টিং সড়কে বেহাল অবস্থা। জাইকার অর্থায়নে ৬ কিলোমিটার এই সড়কের সম্প্রসারণ দুই বছর আগে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কিছুমাত্র কাজ শেষ হলেও সড়কের হালিশহর নয়াবাজার হতে সাগরিকা হয়ে অলঙ্কার পর্যন্ত অংশে অনেক কাজ বাকি। একই অবস্থা বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কের। প্রায় অর্ধযুগ ধরে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। ভাঙাচোরা সড়ক আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকায় চলাফেরা করতে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গাড়িচালকদের। গণপরিবহনসহ যানবাহন চলছে হেলেদুলে। রিকশা-অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন আটকা পড়ছে গর্তে। গর্তের কারণে ছোট ছোট দুর্ঘটনা হচ্ছে, বারবার গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পথচারীরাও নাকাল হচ্ছেন রাস্তায় নেমে। নগরীর পাহাড়তলী, অলঙ্কার, সাগরিকা, বন্দর, ফকিরহাট, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বাকলিয়াসহ প্রায় সব এলাকায় সড়কের বেহাল দশা। চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী রাখতে হলে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে নির্মাণসামগ্রীর দিকে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। গর্তে পানি জমা হওয়ার পর যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে সেই গর্ত বড় হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকে কংক্রিটের রাস্তার কথা বললেও তার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এ ক্ষেত্রে ওয়াসাসহ সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় না হলে সাময়িক সংস্কার করে কোন লাভ হবেনা নগরবাসীর। আমরা আশা করব, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি টেকসই সড়ক নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশন উদ্যোগী হবে। সেবা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরবাসীর ভোগান্তি প্রশমনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এমনই প্রত্যাশা আমাদের।