দোহাজারী ব্রিজ এলাকা থেকে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বালি উত্তোলন

747

খরস্রোতা শঙ্খনদীর চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভা ও পাশ্ববর্তী উপজেলার উত্তর সাতকানিয়া কালিয়াইশ অংশ থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না কোনভাবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের চিঠি পেয়েও সম্পন্ন নিরব রয়েছে প্রশাসন। আজ ২২ নভেম্বর সকালে শঙ্খ নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানব বন্ধনের আয়োজন করেছে স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারী শঙ্খ তীরবর্তী দোহাজারী ব্রিজ থেকে নদীর ৩’শ মিটার দূরে রেলসেতু ও সড়ক সেতু নির্মাণকারী দু’প্রতিষ্ঠান সিটি জয়েন ভেঞ্চার (চায়না রেলওয়ে গ্রুপ কন্সট্রাকশন এন্ড কোং লিঃ) এবং স্পেকট্রা-সিআর ২৪ বি- জয়েন্ট ভেঞ্চারে গত ১ বছর ধরে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা বারবার প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন অজানা কারণে সম্পূর্ণ নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। এদিকে “নবকল্লোল যুব সংঘ” নামে একটি সামাজিক সংগঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শঙ্খনদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, মো. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ। তার স্বাক্ষরিত (স্মারক নং- ০৫.৪২.১৫০০.৩০২.১০.০১.২০১৬-২৫৪৪) একটি পত্র গত ১৩ নভেম্বর চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বালি উত্তোলনের ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ফলে কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা শঙ্খনদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। নির্মিতব্য ২টি সেতুর পিলার ঘেঁষেই নদীর দু’পাশ থেকে একাধিক ভারী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদীর তলদেশ থেকে বাঁধাহীনভাবে তোলা হচ্ছে বালি। অব্যাহত বালি উত্তোলনের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলী জমি ও স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এক প্রকার প্রতিযোগিতামূলকভাবে বালি উত্তোলণ করায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এ দু’প্রতিষ্ঠানের সাথে আতাঁত করে বালি উত্তোলনে সহায়তা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ব্যাপারে ইতিমধ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বেশ কয়েকবার সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হওয়ার পর টনক নড়েনি প্রশাসনের। বিগত ১ বছর ধরে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করায় শঙ্খনদীর তলদেশে গভীরতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে শঙ্খতীরবর্তী এলাকাসমূহ। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন করে নেয়ায় সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সূত্রমতে জানা যায়, ২০১০ সালে বালি উত্তোলন নীতিমালা অনুযায়ী ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদীর তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া সেতু, কালভার্ট, সড়ক, মহাসড়ক, বনাঞ্চল, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে সর্বনিম্ন ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন সম্পূর্ণ বেআইনী। অথচ সেতু নির্মাণকারী ২টি প্রতিষ্টান সরকারি এই আইনকে অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে চলছে বিনা বাধায়। এব্যাপারে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম. বদরুদ্দোজার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বালি উত্তোলনের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনের আলোকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনামূলক একটি পত্র চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছেন এবং বালি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বালি উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় আজ ২২ নভেম্বর সকালে শঙ্খ নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।