তোমায় ভালোবাসি জনক

49

হে আমার স্বদেশ তোমায় বুকে চেপে রাখি অমিত বীর্যে
মৃত্যুর হিম শীতল স্পর্শ ভরা দুর্বার পথে
নরোম স্বদেশ কী আশ্চর্য দৃঢ়তায় কাঁপে
-হঠাৎ জেগে উঠা অগ্নিগিরির স্পর্ধিত লাভায়
যে লাভায় জন্ম নেয়া ভারী কন্ঠের এক বিশাল পুরুষ
যার উদ্ধত বপুতে খেলে গোটা দেশ
চোখের তারায় কাঁপে ব্যাঘ্রের ক্ষীপ্রতা
নির্দেশের কঠিন আঙুলে মহাসাগরের গর্জন-
বাজে ভেরি ধুন্ধুমার চৌদিক আকাশে বাতাসে উঠে রব
সাগরে নদীতে উঠে প্লাবন সুচালু টঙ্কার পাহাড়ে
কোটি লাঠি হয়ে যায় সঙ্গীন
‘এক গায়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল’
কোমর বেঁধে নেয় শক্ত গামছায় মাথা বাঁধে রূপার রুমালে
যদি দেখা না হয় আর কখনো রুমাল সাক্ষী হবে হাসরে
বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজী রব ভুলে যায় সুলতানার সুন্দর মুখ
ভুলতে চেষ্টা করে ভোরের আলো না ফুটতে
মুয়াজ্জিনের সুরেলা আজান
পিতার পবিত্র হাতে তসবিহ্, কাঁধে জায়নামাজ
মসজিদ গমন ইউওটিসি’র এক রোখা ফরহাদের চোখ
টিকরে বেরোতে চায়, চোয়াল হয়ে উঠে দুর্দম
শক্ত পেশি-টান্ টান্ হয়ে যায়, বেরিয়ে পড়ে রুমমেট শামসু মোশারাফদের ছেড়ে, ক্যান্টনমেন্টের বন্ধুর কাছে
বার বার ভেসে উঠে প্রতিবন্ধী ভাই, নিষ্পাপ সুরু’র মুখ
দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে, এক নম্বর গেটে
কলেজের রফিক কবিতার বই ছেড়ে উঠে যায় দলীয় ডেরায়
স্নেহময়ী মায়ের ‘অকর্মণ্য’ ভর্ৎসনা
আর ছোটবোন লতিফার টলটলে চোখের তারা
বড় মনে পড়ে, চতুর সবুজ পাহাড় লুকিয়ে রাখে
আগুয়ান তেজী সঙ্গীন সেনা বন্দরের তীব্র দীর্ঘ সাইরেন
ছারিয়ে চলে জল সেনার বিধ্বংসী কৌশল,
চঞ্চল স্রোতস্বিনী এগিয়ে প্রশমিত করে তন্ডব দহন
আত্মহননোন্মখ বিশ্রস্ত রমণীর পবিত্র রক্ত-স্রোত
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া প্রতিটি ঘর হয়ে যায় দুর্গ
রাতের অন্ধকারে নিকানো দাওয়া হয়ে পড়ে নির্ভীক সভাস্থল
এক মায়ের শাড়ির আঁচল হয়ে যায় শত হাজার সন্তানের
মাথায় স্নেহের নিশান দোয়ার ঐশি তাবিজ
নিশ্চিত মৃত্যু পথের অভয়বাণী, নির্ভীক পিতার লাঙলের ফলা
ভয়াল মারণাস্ত্র, শহীদ মিনারের বুক চিরে
বেরোয় রক্ত, তাজা রক্ত সম্মুখ যুদ্ধের গোলায়
গোপ্তা হামলার পাতানো কৌশলে-
এসএম হলের কৃষ্ণচূড়ার লালিমা ছাড়িয়ে
নবাব বাড়ির ফটক মাড়িয়ে, বুড়িগঙ্গার স্রোতে যায় মিশে
রব, ফরহাদ, রশিদের তাজা রক্ত
নাসিরাবাদ আন্দরকিল্লা বিপণি বিতান
মৌলবী সৈয়দ, স্বপন, মুরিদুল আলম, মমতাজের
কালো জমাট বাঁধা নিস্প্রাণ রক্তে ভিজে যায় পতাকা
হয়ে যায় গাঢ় লাল ছোঁয়ায় কপালে চোখে
আলতো মুদে যায় গভীর প্রশান্তিতে বিদয় প্রিয় দেশ
প্রিয় মাতৃভূমি। প্রিয় মা, জমাট বাঁধা রক্তধারা
লালদিঘি ফিরিঙ্গিবাজার সদরঘাট মাড়িয়ে
লাফিয়ে পড়ে কর্ণফুলীর গভীর বুকে মোহনায়
মিশে যায় পগ্মা মেঘনা ধলেশ্বরী শীতলক্ষ্যায়,
শহর নগর বন্দর অফিস পাড়া কৌশলের মন্দ্রবলে-
ফেরিওয়ালা, রিকশাচালক, ভিখারি তরকারির পশারী বা মেথরাণী
সাহায্যে এগোয় অলক্ষ্যে আড়ালে, ক্র্যাকার ফোটে এখানে ওখানে
ককটেল গণভবনে সচিবালয়ে, রাজাকার বদরের বাঙ্কারে
তল্লাশি চৌকিতে মিলিটারি কনভয়ের পেছনে রাত যায় ভোর হয় ভোর গড়ায় বিকেলে কঠোর কঠিন ছকে রাত নামে
রাত নামে দৃঢ়তায়।