তীব্র গরমে জ্বলছে দেশ সতর্কতা জরুরি

10

‘চৈত্র মাসের দুপুর বেলা আগুন হাওয়া বয়, দস্যি ছেলে ঘুরে বেড়ায় সকল পাড়াময়।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো, চৈত্র গিয়ে বৈশাখের চারদিন গত হচ্ছে, দেশব্যাপী তাপদাহ এতটুকু বিস্তৃত যে দস্যু ছেলেও ঘরের মধ্যে বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। মেঘহীন আকাশে নির্বিঘ্ন আলো ছাড়ছে সূর্য, যেখান থেকে প্রতিদিনই ধেয়ে আসছে তীব্র তাপদাহ, দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বইছে প্রচন্ড তাপদাহ। অপরদিকে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর ও দক্ষিণের জেলাগুলোতে বইছে লু হাওয়া, তাপদাহ এতটুকু অতিক্রম করেছে যে জনসাধারন নিতান্তই প্রয়োজন ব্যতিত ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছেনা। আবহাওয়া অফিসের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় গত মঙ্গলবার ও বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে। ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম পড়েছে এ জেলায়, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে বরিশালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে এখনও সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, এ তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। বড় ধরনের বৃষ্টিরও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন তারা। আবহাওয়া বিশারদদের দাবি, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে, সেখানে কোন কোন রাজ্যে ৪২ থেকে ৪৫ সেলসিয়াস ডিগ্রি গরম পড়বে। বাংলাদেশে তা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তাপমাত্রার বেহিসেবী উল্লম্ফনার জন্য দায় জলবায়ুর পরিবর্তন এবং পাহাড় ও সবুজ প্রকৃতির নির্বিচারে নিধন। চট্টগ্রামে এ দুটি কর্ম প্রভাবশালী ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারের অধিনস্থ বিভিন্ন সংস্থাও সমান্তরালে করে যাচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস নামে খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ এরপর সিডিএ কর্তৃক নির্মিত এক্সপ্রেস ওয়ের র‌্যাম্প তৈরির অজুহাতে টাইগারপাস এলাকার প্রায় ৬০টির মত গাছ কাটার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়েছে। এ যদি হয়, পরিস্থিতি তবে তাপদাহে সিদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প আর কিছুই নেই। তীব্র গরমে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলার দায় অবশ্যই প্রকৃতি ধ্বংসের সাথে জড়িতদের নিতে হবে। আমরা লক্ষ করছি, এ প্রচন্ড গরমে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আয় উপার্জনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এরপরও জীবন তো থেমে থাকার নয়, ঘরের বাইরে বের হতেই হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের। সর্বত্র হাঁসফাঁস, কোথাও স্বস্তি নেই। প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সকাল থেকেই সুর্যতাপ সময় যতই অতিক্রম হচ্ছে ততোই তাপদাহ বাড়ছে, সেইসাথে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে দেশে বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন এর চেয়ে ৪০০ মেগাওয়াট বেশি। এরপরও কেন লোডশেডিং হবে তা বোধগম্য নয়। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম লোডশেডিং হলেও গ্রাম ও মফস্বল শহরের অবস্থা ভয়াবহই বলা যায়। চাহিদা অনুপাতে উৎপাদনের হিসাব মিল থাকলে লোডশেডিং থাকার কথা নয়, এরপরও কেন নাগরিকদের বিদ্যুৎ সমস্যায় ভোগতে হবে-তা খতিয়ে দেখা দরকার। সম্প্রতি তীব্র গরমে বেশ কয়েকজনের হিটস্ট্রোকের খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহব্যাপী শুরু হওয়া প্রখর রৌদ্রতাপ, হাওয়াবিহীন প্রকৃতি নিকট অতীতে জনসাধারন এমন মাত্রাতিরিক্ত তাপ প্রত্যক্ষ করেনি। বাংলাদেশ ছয় ঋতুরদেশ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গুটিকয়েক ঋতুর অস্তিত্ব অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের উপস্থিতি জনজীবনের জন্য কেবল বিব্রতকর নয় চরমভোগান্তির কারণও বটে। প্রচন্ড তাপে কেবল জনজীবন বিপর্যস্থ তা নয় প্রাণীকুলও অতিষ্ঠ। বিশেষ করে গরু, ছাগল, হাস, মুরগী, পুকুরের মাছ কোনকিছুই স্বস্তিতে নেই। ক্ষেতের সবজি সহ অন্যান্য কৃষি উৎপাদন পণ্য সূর্যের তাপে বিবর্ণ ও হলুদাভাব হয়ে পড়েছে। তাপদাহের এই সময় গুলোতে অবশ্যই সতর্কতার বিকল্প নেই। অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে পানি বের হওয়ার ফলে পানি শুন্যতা হতে পারে বিধায় বেশী বেশী পানি পান করা জরুরি। অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা স্থানে অবস্থান করাই শ্রেয়। আবার অতি গরম পরিবেশ হতে অতিঠান্ডা পরিবেশে না যাওয়াই উত্তম, বাইরে থেকে এসেই এসিতে প্রবেশ করা বিপদের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সুতি এবং ঢিলেঢালা পোশাকই ভাল, ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই ছাতাকে সঙ্গী হিসেবে রাখা বাঞ্ছনীয়। গরমে অতি মসলাযুক্ত খাবারসহ ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করাই ভাল। ফ্রিজ ও বরফের পানি পরিত্যাগ করে ডাব, ওরসেলাইন ও সুপেয় পানি পান করতে হবে। এককথায় সতর্কতা ও সচেতনতাই দিতে পারে তীব্র তাপদাহ হতে মুক্তি।