টেকনাফে অপহৃত ১০ জন উদ্ধার

8

পূর্বদেশ অনলাইন
কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা গত দুই দিনে তিনটি এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। তবে ধরা পড়েননি অপহরণে জড়িত কেউ। পুলিশ বলছে তাদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে। টেকনাফের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় অপহৃতদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি। তিনি বলেন, “তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে টেকনাফ থানা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ফাঁড়ির ৫০ জন পুলিশ সদস্য একযোগে জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান শুরু করে। পাশাপাশি র‍্যাব সদস্যরাও অভিযানে যোগ দেন। “এক পর্যায়ে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলা হয়। তারপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে অপহৃত ১০ জনকে পাহাড়ে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রটি। পরে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। আর অপহরণকারীদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান চলমান রয়েছে।“
তবে মুক্তিপণের বিনিময়েই অপহৃত ১০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, “পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ১০ জনকে অক্ষত অবস্থা উদ্ধার করেছি। এখানে মুক্তিপণের বিষয়টি পুলিশ অবহিত নয়। এখন তাদের পরিবার কাউকে টাকা দিলে সেটা তো আমাদেরকে (পুলিশ) জানায়ও না। তিনি আরও বলেন, “অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা কোনো তথ্য দেয় না। এমন কি একাধিকবার চেষ্টার পরও লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না। স্বজনরা তথ্য না দেয়ায় পুলিশ তার কাজে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে।“ “তবে সবকিছু মাথায় নিয়ে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ১০ জনের কাছে থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। “ উদ্ধার হওয়াদের রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ওসি। এর আগে মঙ্গলবার ও বুধবার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তিনটি এলাকা থেকে এই ১০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অপহৃতের স্বজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, বুধবার উনচিপ্রাংয়ের ১২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাহাড়ি এলাকা থেকে ছয় জন, পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে দুই জন এবং মঙ্গলবার কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে দুই জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পশ্চিম পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃতরা হলেন, করাচি পাড়া এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (১৫), বেলালের ছেলে জুনাইদ (১৩), নুরুল আমিনের ছেলে সাইফুল (১৪), শহর আলীর ছেলে ফরিদ (৩৫), নাজির হোছনের ছেলে সোনা মিয়া (২৪), শহর মুল্লুকের ছেলে গুরা পুইত্যা (৩২)। পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃতরা হলেন, রইক্ষ্যং উত্তর পাড়ার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোসেন ওরফে বাবুল (৩৩) এবং রইক্ষ্যং দক্ষিণ পাড়ার কালা মিয়া ওরফে লম্বা কালুর ছেলে ফজল কাদের (৪৭)। মঙ্গলবার কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু আনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) এবং কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭)। স্বজনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, উনচিপ্রাং ও কম্বনিয়া থেকে অপহৃতদের ছেড়ে দিতে দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণ দাবি করেছে। তবে পুটিবুনিয়া থেকে অপহৃত দু’জনের স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বুধবার রাতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেন, উনচিপ্রাং এলাকার ছয় জন বাসিন্দা সকালে স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে যান। দুপুরের পরও তারা বাড়ি ফিরেননি। বুধবার রাতে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজালাল বলেন, উনচিপ্রাং এলাকার ছয় জন বাসিন্দা সকালে স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়ানো ও চাষের কাজ করতে যান। দুপুরের পরও তারা বাড়ি ফিরেননি। “এক পর্যায়ে দুপুর ২টার পর অপহরণকারী চক্রের এক ব্যক্তি অজ্ঞাত স্থান থেকে ০১৮৯৭২৬৬৮৮৮ নাম্বার থেকে একজনের বাবার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।” “এসময় অপহৃতদের মারধর করা হচ্ছে জানিয়ে চিৎকার শোনানো হয়। এ বিষয় সম্পর্কে পুলিশকে জানালে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”
শাকিল মিয়ার বাবা লেদু মিয়া বলেন, সকালে গরু চড়াতে গেলে বিকাল পর্যন্ত ছেলে ফেরত না আসায় উদ্বিগ্ন ছিলেন। এর মধ্যে একটি নম্বর থেকে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবিও করা হয়েছে। এখন তারা আতঙ্কে রয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, বুধবার সকালে পুটিবুনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চড়াতে গিয়ে তার ইউনিয়নের আরও দুই বাসিন্দাও নিখোঁজ হয়েছেন। বুধবার রাত ৯টার পরও তারা বাড়ি ফিরেননি। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দু’জনও দুর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। কম্বনিয়া থেকে অপহৃতদের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “অপহৃত দু’জনের পরিবারের কাছে বুধবার সকালে ফোনে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কত টাকা চাওয়া হয়েছে স্বজনরা কিছুই বলছেন না। ধারণা করা হচ্ছে হুমকির কারণে পুলিশ এবং জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে গোপনে টাকা দিয়ে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা করছেন স্বজনরা। গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। এর মধ্যে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে অপহরণ হওয়া মাদ্রাসা ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ চক্রের পাঁচ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে। অপহরণের শিকার হওয়াদের পরিবারের তথ্য বলছে, অপহৃতদের মধ্যে অন্তত ৫১ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে।