চকরিয়ায় মিথ্যা মামলায় জমি মালিকদের হয়রানি

6

চকরিয়া প্রতিনিধি

কক্সাজারের চকরিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে জমি কিনে ভোগ দখলে যেতে না পেরে একের পর এক মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে প্রকৃত জমি মালিকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কতিপয় ভূমিসদ্যুদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ভূমিদস্যুচক্রটি তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে খতিয়ান সৃজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি ব্যাংক ডুলাহাজারা শাখা থেকে জমি বন্ধকের নাম দিয়ে হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল কোটি টাকা। বিষয়টি জানার পর প্রকৃত জমির মালিক তার বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে হাজির হলে ভন্ডুল হয়ে যায় সেই মিশন।
ভূমিদস্যু চক্রের মিথ্যা মামলার হয়রানির শিকার জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া মৌজার বিএস ৩০, ৬১, ও ৮৯ নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক কবির আহামদের কাছ থেকে চারটি পৃথক রেজিস্ট্রি কবলামূলে ১ একর ৪০ শতক জমি ক্রয় করেন আমার পিতা আকবর আহামদ। পরবর্তীতে উক্ত জমি বন্টনের সুবিধার্থে খতিয়ানের অপরাপর মালিকদের সাথে রেজিস্ট্রিকৃত অংশনামা সম্পাদিত হয়। ওই অংশ নামায় আমার পিতা ছিলেন তৃতীয় পক্ষ। এর পর থেকে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জমি অদ্যাবধি পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখলে রয়েছে। খতিয়ানের রেকর্ডীয় মালিক কবির আহামদ তার অংশের জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হওয়ার পর ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী লামা উপজেলার ২৮৬ নং ফাঁসিয়াখালী মৌজার ফকিরাখোলা এলাকায় বসতি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু উক্ত কবির আহামদ কতিপয় ভূমিদস্যু চক্রের প্রলোভনে পড়ে তার নামীয় সম্পত্তি ইতিপূর্বে বিক্রির তথ্য গোপন করে তার নামীয় অংশের বিক্রিত জমি নিয়ে পুনরায় খতিয়ান সৃজন করে। পরবর্তীতে উক্ত জমি হতে ৬৭ শতক জমি পার্বত্য লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী মৌজার ২৮৬ নং খরিনাখোলা এলাকার বাসিন্দা রেজাউল কবির মানিক ও খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল কবিরকে রেজিষ্ট্রি কবলামূলে বিক্রি করে দেন। এই জমি বিক্রির সময় কবির আহামদ তার বিক্রিত জমি যে পূর্বের বিক্রিত জমি সে তথ্যটিও গোপন করেন। আর জমি ক্রেতারাও পূর্বের সকল তথ্য গোপন করে তাদের ক্রয়কৃত জমি নিয়ে বিএস ৬৩২ নং খতিয়ান সৃজন করেন।
জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি সকল ডকুমেন্ট নিয়ে চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে একটি লিখিতি আপত্তি দাখিল করি। পরবর্তীতে এসি ল্যান্ড মহোদয় পক্ষ বিপক্ষ সকলের কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে তাদের খতিয়ান বাতিল করে দেন।
জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, এত কিছুর পরও থেমে যায়নি ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতা। তথ্য গোপন করে সৃজন করা ৬৩২ নম্বর বিএস খতিয়ান এসিল্যান্ড মহোদয় চকরিয়া কর্তৃক বাতিলের বিষয়টি গোপন করে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪ ধারায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এর আদালতে একটি এম আর মামলা দায়ের করেন রেজাউল করিম মানিক ও মো. নুরুল কবির। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় বাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি সহকারি কমিশনার (ভূমি) চকরিয়াকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এছাড়া সহকারি কমিশনার (ভূমি) চকরিয়া কর্তৃক ইতিপূর্বে বাতিল করা বিএস ৬১২ ও ৬৩২ নম্বর খতিয়ান পূর্নবহালের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালতে অপর একটি নামজারী রিভিশন মিস মামলা দায়ের করেন রেজাউল করিম মানিক ও মো. নুরুল কবির। বর্তমানে এ দুইটি মামলা পৃথক দুই আদালতে বিচারাধিন রয়েছে।
ভূক্তভোগী জমির মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, তথ্য গোপন করে প্রতারনার মাধ্যমে জমি কিনে খতিয়ান সৃজন করে কৃষি ব্যাংক ডুলাহাজারা শাখা থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে না পেরে আমার ও আমার পরিবারের উপর সংক্ষুদ্ধ হয়ে পড়ে ভুমিদস্যু চক্রটি। তারই ধারাবাহিকতায় ভূমিদস্য চক্রটি আমাকে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর জন্য হুমকি ধমকি দিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার থানায় সাধারণ ডায়েরীও (জিডি) করেছি। গত ৮ ফেব্রæয়ারি রাত ১০টার দিকে খুটাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেধাকচ্ছপিয়া পাগলিরবিল এলাকায় মাষ্টার হোমিও নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় আমি ডুলাহাজার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আয়াতুল্লাহ সওদাগরের সাথে পাগলিরবিল এলাকার মোহাম্মদ হোসেন সওদাগরের অফিসে একটি শালিশী বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ইউপি সদস্য আয়াতুল্লাহসহ শালিশী বৈঠকে উপস্থিত লোকজন তাৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হোমিও দোকানটি আগুনে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করি। কিন্তু পরবর্তীতে এ ঘটনায় ভুমিদস্যু চক্রের ইন্দনে হোমিও দোকানের মালিক আবু সাঈদ মো. জুয়েল নামের এক ব্যক্তি আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের আসামী করে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে চকরিয়া থানা পুলিশ। পুলিশী তদন্তে জালাল উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত না থাকার বিষয়টি উঠে আসায় পরবর্তীতে থানা পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে। এরপরও থেমে যায়নি ভূমিদস্যু চক্রের অপতৎপরতা। অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৮দিন পর একই চক্রটি পুনরায় অজ্ঞাতনামা আসামী দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি বর্তমানে পুলিশের তদন্তনাধিন রয়েছে। জালাল উদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমার ৪৩ বছর বয়সে থানা ও আদালতে কোন জিডি বা মামলার আসার আসামী হয়নি। শুধুমাত্র বাবার কেনা পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে একের এক মিথ্যা ও হয়ানীমুলক মামলার আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।