গমের বাজার গম্ নয় সিন্ডিকেট কারসাজি কিনা-খতিয়ে দেখা জরুরি

22

 

সরকারি হিসাবে দেশে গমের উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম মিলে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আগামী ছয়মাসের অধিক গমের কোন বাজার ঘাটতি হবেনা। এরপরও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কিছুদিনের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গম রপ্তানি বন্ধ করেছে- এ অজুহাতে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মত তেলে উত্তাপ বাজার আরো উত্তপ্ত করে চলছে। তেলের দামে তেলাসমাতি বন্ধ না হতে গমের বাজার আর কিছুটা চালের বাজারে উত্তাপ সৃষ্টি কারা করছে? তা খতিয়ে দেখা জরুরি। সূত্র জানায়, দেশে বছরে ৭৫ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে গম উৎপাদিত হয় ১১ লাখ টন। চলমান অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি হয়েছে ৫৬ লাখ টন। পাইপলাইনে আছে আরও ৬ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় পচানব্বই ভাগ গম বর্তমানে দেশে মজুদ আছে। তারপরও রহস্যজনকভাবে দেশে গমের বাজার উত্তপ্ত হয়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহর ব্যবধানে গমের দাম বেড়েছে মণে ২০০ টাকা। এর প্রভাব পড়ছে আটা, ময়দাসহ গম থেকে তৈরি নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে। বলাবাহুল্য, চালের পর আমাদের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নানা কারণে এখানকার মানুষের খাদ্যাভ্যাসে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরির জন্য, বিশেষ করে আটা ও ময়দার ওপর একটা বিরাট অংশের মানুষের নির্ভরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অর্থাৎ গমের দাম বাড়া মানে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। এ বিষয়টি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ভোজ্যতেল নিয়ে দেশে কয়েক মাস ধরে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। লিটারপ্রতি ২০০ টাকা দিয়েও দেশের প্রায় সব পরিবারে যা তরকারি রান্নার প্রধান উপকরণ সেই সয়াবিন তেল জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল ও চিনির মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বহু দিন আগেই সাধারণ মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে সীমিত আয়ের পরিবারগুলোর নাগালের বাইরে চলে গেছে।
দেশের উৎপাদিত গমের বাইরে ঘাটতি পূরণ করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গম আমদানি করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ চলার কারণে গত তিন মাসে দেশ দুটো থেকে গম আমদানি হয়নি বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে গমের জন্য ভারতই আমাদের ভরসা। সম্ভবত এর সুযোগ নিয়ে গমের দাম বাড়ানোর ছুতো হিসেবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা গম রপ্তানির ওপর ভারত সরকারের দেওয়া সা¤প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কথা বলছেন। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্টজন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ভারতের এ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। তা ছাড়া, ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে অন্তত পাঁচ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছেন। শিগগিরই তা দেশে চলে আসবে। আমরা লক্ষ্য কওে আসছি যেকোন সংকটময় মুহূর্তে সরকার চাইলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারে। দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে তো নয়ই; ভবিষ্যতেও সরবরাহে কোনো সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকা সত্তে¡ও দেশে গমের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আর এ অস্থিরতার পেছনেও কথিত সিন্ডিকেটকে দায়ি করা হচ্ছে। দে;খা যাচ্ছে, বাজাওে যখনই কোন পণ্যেও দাম বাড়ে তখনই সিন্ডিকেটের কথা আসে। তবে কারা এ অদৃম্য সিন্ডিকেটের নিয়ামক। সরকারের উচিৎ তাদের খুঁজে বের করা। কারণ সিন্ডিকেটের নামে যারা এখন গমের বাজার বা অন্যন্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন, তারা আর যাই হোক সরকার ও দেশের হিতকাক্সক্ষী হতে পারেন না। তাদের কঠোর হাতে দমন করা এখনই সময়। না হয় তেলবাজ, চালবাজ আর মানুষের গম্ (চট্টগ্রামের ভাষায় ভালো) যারা কেড়ে নিতে চায়, দেশকে শ্রীলঙ্কা বানাতে চায়- তারা দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এ ছাড়া আমরা এটাও মনে করি যে, বাজারে গমের সরবরাহে ভবিষ্যতেও যাতে কোনো সংকট না হয় সে জন্য এখনই সরকারকে অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্যটির ওপর ওই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এর পাশাপাশি তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে রাশিয়া বা অন্য কোন দেশ থেকে গম আনা যায় কিনা তা-ও ভেবে দেখতে হবে।