গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য এখনই থামানোর উদ্যোগ নিন

13

একের পর এক বিপদ, মহামারি, যুদ্ধ মানবতার আর্তনাদ বাড়িয়েই দিচ্ছে। দুর্বিসহ হয়ে উঠছে মানুষের জীবন ধারণ। নানা অজুহাতে বাড়ছে তেলসহ নিত্যপণ্যেও দাম। সম্প্রতি সরকার বিশেষ অজুহাতে বাড়িয়েছে জ্বালানী তেলের দাম। এতে এ দেশের সাধারণ মানুষের সামগ্রিক জীবনে নেমে এসেছে আরেক দফা কষ্ট। জ্বালানী তেলের দামেই জ্বলিয়ে উটল গাড়ির ভাড়া, নিত্য পণ্যের বাজার। সরকার তড়িগড়ি করে আরেকদফা বাড়াল গণপরিবহনের ভাড়া। কিন্তু যে হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বাস্তবে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক তার কয়েকগুণ বেশি আদায় করছেন সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে-এমন অভিযোগ সাধারণের। বাস ও মিনি বাসে প্রতিদিন বাস শ্রমিকদের সাথে যাত্রীদের বাকবিতÐা লেগেই আছে। প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ নিয়ে সরেজমিনে প্রতিবেদনও ছাপানো হচ্ছে, কিন্তু ‘কে শুনে কার কথা’ এমনটি ভাব নিয়ে নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষোভ বাড়ছে ভুক্তভোগী যাত্রী সাধারণের মধ্যে। এ অবস্থার দ্রæত সমাধান প্রয়োজন। গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি জোরদার করা অতীব প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, করোনার ধাক্কা মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়ানো হয়েছে। যে কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ওপর। ফলে ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে গেছে। আমাদের দেশে তেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়া ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেয় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকরা। বাসের ক্ষেত্রে সরকার ও বাসের মালিক-শ্রমিক নেতারা মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে ভাড়া নির্ধারণ করে। নির্ধারিত ভাড়ারও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করে বাসের শ্রমিকরা। বাসের মালিক-শ্রমিক সিন্ডিকেটের কাছে আজ সাধারণ মানুষ জিম্মি। সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। তখন বাস ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ ও লঞ্চ ভাড়া ৩৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই সময়ে তেলের দামের চেয়ে বেশি হারে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বেড়েছিল। বিআরটিএ থেকে সর্বনিম্ন বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা এবং কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ছিল ২ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু বাসের সুপারভাইজাররা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করত কিলোমিটার প্রতি ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা। এতে করে বাসের মালিক এবং শ্রমিক সিন্ডিকেট গত কয়েক মাসে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এক বছর না হতেই সরকার আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। তেলের দাম বাড়াতে লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু বাস মালিক এবং শ্রমিক সিন্ডিকেট। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের ওপর। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। সবকিছু মিলে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কতদিন টিকে থাকা যাবে তা বলা অনিশ্চিত। বিশেষ করে বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমছে, তখন দেশে ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। এটি অন্যায় এবং অযৌক্তিক। বাংলাদেশে ৯৭ শতাংশ চাষাবাদ মেশিন দিয়ে চাষ করা হয়। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে কৃষকের সেচে খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। কৃষক সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই চাষাবাদ বন্ধ করে দিচ্ছে। ফসল উৎপাদনের পর অনেকেই ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিককে যাতায়াত ভাতা দেয়া হয় না। তারা শুধু বেতন পায়। বেতনের টাকা থেকেই যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এক জরিপে দেখা গেছে, এসিদ্ধান্তের ফলে নগরীর প্রতিজনের যাতায়াত খরচ ৭০ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি মাসে বাড়বে ২ হাজার ১শ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া খুবই জরুরি। আমরা রোজার আগে থেকে দেখেছি দ্রব্যমূল্য বাড়ছে আর কমছে না। বাজার সরকারের কোন রকম নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে সরকার এক লাফে তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়িয়েছে এটা একদম অপরিণামদর্শিতা। বলতে দ্বিধা নেই, গণপরিবহনে এখন যে যার মতো করে ভাড়া আদায় করছে। কোনো নিয়ম কানুনের বালাই মানছে না বাস শ্রমিকরা। বাসের নৈরাজ্য যেন থামছেই না। সরকারের উচিৎ জনগণের কষ্ট লাঘবে এখনই দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করে গনপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর আইন পদক্ষেপ নিতে হবে।