কাপ্তাইয়ে অন্ধ লক্ষীরাণী পেল ‘লক্ষীনিবাস’

11

কাপ্তাই প্রতিনিধি

স্বামী সন্তান হারা ষাটোর্ধ্ব অসহায় অন্ধ লক্ষীরাণী দে পেল “লক্ষীনিবাস”। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানের উদ্যোগ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লক্ষীরাণী দে মাথা গোঁজার ঠাই পেলেন। এতে লক্ষীরাণী দে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতালের বারান্দায় গত ১৫ বছর ধরে লক্ষীরাণী দে বসবাস করে আসছে।
ওই বারান্দা ছাড়াও মিশন হাসপাতাল গেইট এবং চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারে দিনরাত কাটত তার। কি শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোনটিই তার জীবনে প্রভাব পড়েনি। একবেলা খাবার পেলেই চলে যায় তার দিনরাত। জীবনে সুখ কি, লক্ষীরানী দে গত ৩০ বছরেও বুঝেনি। রাঙামাটির রাজবাড়ি এলাকায় তার বাপের বাড়ি। বাবার নাম ক্ষিতিশ বিশ্বাস। কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ফলে তাদের পৈত্রিক বাড়ি কাপ্তাই লেকে তলিয়ে যায়। এরপর স্বাধীনতার আগেই স্ব-পরিবারে তারা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা হিন্দু পাড়ায় মামার বাড়ি চলে আসে। সেখানেই তার বিয়ে হয় রাউজান উপজেলার উনসত্তর পাড়া গ্রামের মানিক চন্দ্র দে’র সাথে। সুখেই চলছিল তাদের জীবন। স্বামী কৃষি কাজ করে সংসার চালাতো। এরইমধ্যে তার ২ সন্তান ভুমিষ্ট হয়। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন টিকেনি। তার প্রথম সন্তান লিটু দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে দূরারোগ্য ব্যধিতে মারা যাবার ৬ বছর পর আরেক ছেলে সুজয় দে ও ১১ বছর বয়সে মারা যায়। ছেলে হারা লক্ষীরাণীর জীবন এক বিভীষিকায় পরিনত হয়। এরইমধ্যে তার জীবনে আসে আরো একটি দুঃস্বপ্ন। ১৯৯২ সালে চোখে দেখা দেয় তার কঠিন রোগ। অপারেশন করাতে গিয়ে তিনি হারান তার দু’চোখ। চোখ হারানোর পর অনেকের বাসায় তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে মানুষের দেওয়া অন্নবস্ত্রে তার জীবন চলে। যেদিন পায় সেদিন খায়, না পেলে কখনও পানি খেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়ে লক্ষীরাণী দে। পত্র পত্রিকায় লক্ষীরাণী দেকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রচারিত হয়। এসব সংবাদ নজরে আসার পর এগিয়ে আসেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান। তিনি বেশ কয়েকবার মিশন হাসপাতাল গেইট এলাকায় এসে লক্ষীরানীর খোঁজ খবর নেয় এবং তাকে আর্থিক সহায়তা করেন। সেসময় ইউএনও মুনতাসির জাহান তাকে একটি ঘর করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। ইউএনও’র এই উদ্যোগে এগিয়ে আসে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা মংচিং মারমা। তিনি এক গন্ডা জায়গা দেন লক্ষীরানী দে’ কে ঘর করে দেওয়ার জন্য।
সেই জায়গার উপর কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান স্থানীয় উদ্যোগে গত মে মাসে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তিনি কথা দিয়েছিলেন বর্ষার আগেই লক্ষী ঘরে উঠবে। কথা রেখেছেন তিনি। অবশেষে সম্প্রতি কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান ওই জায়গায় নিজে এসে অন্ধ লক্ষীরানী দে কে নতুন ঘরে তুলে দেয়। লক্ষীর জন্য নতুন কাপড়, খাবারদাবার, ঘরের সরঞ্জামাদিসহ নিয়ে আসেন তিনি। এসময় উপস্থিত সকলকে মিস্টিমুখ করিয়ে “লক্ষীনিবাসের” যাত্রা শুরু করা হয়। কাপ্তাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, চিকিৎসক ডা. দেওয়ানজী, সজল বিশ্বাস, কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত প্রমুখ।