কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা বিধান জরুরি

14

দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সৈকত সমূহে যে সকল পর্যটন সুবিধা রয়েছে তার তুলনায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখনো পর্যটকবান্ধব হয়ে ওঠেনি। অথচ দেশ বিদেশের পর্যটকে মুখর থাকে সবসময় এ সৈকত এলাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে প্রতিনিয়ত পর্যটক যায় কক্সবাজার। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সমুদ্র সৈকতে স্নান করার লোভ সামলাতে পারে না। বিশেষত দুরন্ত কিশোর যুবকেরা কক্সবাজার পৌঁছেই উত্তাল সমুদ্রের লোনা জলে স্নান করতে নেমে পড়ে। সৈকতে নামার বিষয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের তেমন তৎপরতা দেখা যায় না। কোন পর্যটক ঢেউয়ের টানে ভেসে যাবার পর তাকে উদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তৎপর হয় সংশ্লিষ্টরা। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়-সম্প্রতি তাহসিন নামে কুমিল্লার এক মাদরাসা ছাত্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মৃত্যুবরণ করে। সে বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ভেসে ওঠে। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। পূর্বদেশ পত্রিকার আরেক প্রতিবেদন হতে জানা যায় বিগত ৭ বছরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ৩৪ জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটেছে। এরা সবাই সৈকতে আনন্দ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে সরব ও বৃহৎ পর্যটন অঞ্চল। এখানে সমুদ্রের সাথে পর্যটকরা হৃদয়ের মিতালী অনুভব করতে ছুটে যায়। পর্যটকরা দেশের পর্যটন খাতকে সরব করে রাখছে। পর্যটন খাতে সরকারি-বেসরকারি আয় দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, কক্সবাজারসহ দেশের সকল পর্যটন অঞ্চলকে পর্যটন মন্ত্রণালয় পর্যটনবান্ধব করে তুলতে সক্ষম হয়নি। বিশেষ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা যেরকম হওয়ার কথা তা হয়নি। কিছুদিন পূর্বে কক্সবাজারে পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। পর্যটকদের পর্যটনে আকৃষ্ট করতে জেলা প্রশাসন ওই মেলার আয়োজন করে। আমরা উক্ত বিষয়ে পরামর্শ স্বরূপ বলেছিলাম মেলা জমিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার চেয়ে কক্সবাজারে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও সম্পূর্ণ এলাকাকে পর্যটকবান্ধব করে গড়ে তুললে এমনিতেই কক্সবাজার সৈকত প্রতিদিন পর্যটন মেলার মতো পরিবেশ প্রতিয়মান হবে। সমুদ্র তথা সৈকত এলাকায় সমুদ্রের ঢেউয়ের সমারোহ নৈমিত্তিক ব্যাপার। সৈকতে পৌঁছে পর্যটকরা সমুদ্রের চড়াই-উৎরায়ে বাস্তবে না হলেও কল্পনায় ভেসে বেড়ায়। সৈকতে পৌঁছলে সবাই একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। কিশোর-কিশোরী যুবক যুবতীরা নেমে পড়ে সৈকতের উত্তাল গৈরে। আবেগের প্রাবল্য কখনো শুভ নয়। তারপরও অল্প বয়সীদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আবেগের বশে সৈকতের জলে নেমে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে, অথচ পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকরা নিরাপদে সৈকতে স্নান করার কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সৈকতে নামার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা আমরা দেখিনা। সৈকতে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা হাতে গোনা। অথচ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা হাজার হাজার নর-নারী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত হচ্ছে এবং সেখানে অনেকে সৈকতের জলরাশিতে স্নান করছে। কোন পয়েন্টে বাধ্যতামূলকভাবে জীবন রক্ষাকারী কোন আয়োজন কর্তৃপক্ষের উপহার হিসেবে পায় না সৈকতগামীরা। বিদেশের প্রত্যেক সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সরকারি উদ্যোগে সবধরনের পর্যটকদের জন্য নিরাপদে সমুদ্র স্নানের কার্যকর ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সতর্কতাকারী নিয়োগ জরুরি