একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস সার্বজনীন করতে জটিলতা সমূহের অবসান জরুরি

27

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ জনিত কারণে এ বছরের মার্চ মাস হতে দেশের সকল শিক্ষা/প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়েছে। যার কারণে দেশের শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন। এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিগত বছর পাস করা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের এইচএসসি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ তথা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ার বোর্ড ঘোষিত মেয়াদ শেষে একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাসের উদ্বোধন করেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। পত্রিকান্তরে এ অনলাইন ক্লাসকে ‘মন্দের ভালো’ আখ্যায়িত করা হয়েছে। গরিব ও পিছিয়েপড়া শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। যেকোন দেশে অনলাইন শিক্ষাকে কার্যকর করতে দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন পূর্ব-শর্ত। কম খরচে পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ছাড়া অনলাইন ক্লাসের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম বেশি। ইন্টারনেটের গতি খুবই শ্লথ। তাছাড়া দেশের সকল শিক্ষার্থীর কাছে এ্যানড্রয়েড বা স্মার্টফোন সেটও নেই। দেশের নগরীগুলোর শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরতলীর শিক্ষার্থীদের চেয়ে একটু এগিয়ে। সারাদেশের শতকরা দশ পার্সেন এর বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না। সারাদেশের ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক না করে অনলাইন ক্লাস থেকে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারবে না। এর জন্য দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে শতভাগ কার্যকর রাখতে হবে। বর্তমানে অনলাইন ক্লাস মানে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো। প্রকৃতপক্ষে অনলাইনে শেখা, শতভাগ কার্যকর শিক্ষা নয়। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেখা হয়, কিছু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। প্রকৃত শেখা বা জ্ঞান অর্জন হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঐতিহ্যকে পাশ কাটিয়ে অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তথ্য-সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কিছুটা সুফল পায় মাত্র। সার্বিক শিক্ষা, জ্ঞান ও গবেষণা অনলাইনের উপর ভর করে চলতে পারে না।
বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক এবং সার্বক্ষণিক না করে, ইন্টারনেটের গতি দ্রæততর না করে শিক্ষার্থীদের হাতে এনড্রয়েড তথা স্মার্টফোন এবং লেপটপ পর্যাপ্ত না করে অনলাইন ক্লাস চালু করে সকল শিক্ষার্থীকে শিখন ফলের আওতায় আনা সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের সিংহভাগ শিক্ষক অনলাইন ক্লাসের নিয়ম কানুন জানেন না। যারা জানে তাদের অনেকে ইন্টারনেট বিভ্রাটে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অনেকে জানেও না কিভাবে ভার্চুয়াল ক্লাস নিতে হয়। আবার অনেকের গুগল এবং জোমের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণাই নেই। এমতাবস্থায় অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সারাদেশের শিক্ষার্থীরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত।
সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পারায়, আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন শিক্ষার প্রতি জোর দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে যতই জোরাজুরি করা হোক, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থার যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। সচেতন ও বিত্তবান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর সুফল কিছুটা প্রাপ্ত হলেও এতে করে সার্বিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপকার হবে না। দেশের প্রচলিত শিক্ষার সাথে অনলাইনকে সার্বিকভাবে সংযুক্ত করা সম্ভব হলে আধুনিক বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা মানসম্মত করে গড়ে তুলতে পারবো। আমরা আশাবাদী করোনার সংকট কাটিয়ে এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আবার সচল হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ রোধে দেশের সবাইকে সচেতনতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে।