এইচএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যথার্থ মূল্যায়ন বিষয়ে সতর্কতা জরুরি

63

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে অর্থনীতির চাকা সচল করতে বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট সবকিছু খুলে দিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা জটিলতা দেখা দিলেও সংকটে পড়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। নিয়ম ও সিডিউল অনুযায়ী এপ্রিলে এ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ বন্ধের কারণে প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেছে। ফলে পরীক্ষার্থীদের এ দীর্ঘসময় অপেক্ষা আর মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটতে হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের ফল নির্ধারণের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের এ সিদ্ধান্তটি যথার্থ ও সময়োপযোগী। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, কোভিড-১৯এর সংক্রমণ এখনও তুলনামূলকভাবে কমেনি; বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) সতর্ক করেছে, আসন্ন শীতে কোভিড নতুন মোড় নিতে পারে বলে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কোভিডের ২য় সংক্রমণ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় পরীক্ষার চেয়ে ছাত্রের জীবন খুবই গুরুত্বপুর্ণ। যদিও জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এইচএসসি পরীক্ষা একটি টার্নিং পয়েন্ট, যা একজন ছাত্রের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন আমাদের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষ করে একটি সনদ তারা পান। যেটা তার আগামীকে গড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, সরকার যে মূল্যায়ন পদ্ধতির ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করবে-তা যৌক্তিক এবং সতর্কতার সাথে করলে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা যাচাইয়ে সমস্যায় পড়বে না। সূত্র জানায়, জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলের গড় মূল্যায়ন করেই এইচএসসি পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হবে। আর এই ফল প্রকাশ করা হবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
উল্লেখ্য যে, গত বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এবারের পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তটি জানান। এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য ৩০ থেকে ৩২ কর্মদিবসের প্রয়োজন। পরীক্ষার সময় এক বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থীর আসন দেয়া হয়। করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি পরিস্থিতি বিবেচনায় এক বেঞ্চে দুজন আসন দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে দ্বিগুণ কেন্দ্র ও শিক্ষকসহ নানা লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হবে। যা বাস্তবতার নিরিখে যোগান দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায়, সরকার যথার্থ বিবেচনা করে পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে আনেন মন্ত্রী। তবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে কেউ সুযোগ পেয়েছে আবার কেউ বঞ্চিত হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জটিলতার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তাদের পরামর্শ এ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম পরীক্ষা না নিয়ে বিকল্প মূল্যায়নে যেতে হচ্ছে সরকারকে। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। ভবিষ্যতে তারা কীভাবে কোন পেশায় যেতে পারবে, এ পর্যায়েই তা অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত হয়ে যায়। ফলে এইচএসসির ফল শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা মনে করি, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা আসবে। এগুলো জটিলভাবে চিন্তা না করে সহজতর পদ্ধতি তৈরি করে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে আমরা মনে করি না যে, পরীক্ষার ফল হেরফের হলে কোন ছাত্রের বিশেষ সংকট হবে। যে পরীক্ষায়ই সে অংশগ্রহণ করুক তার মেধা হলো তার জীবন গঠনের মূল জায়গা। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ যদি তার না থাকে সেখানে বিপত্তি দেখা দেবে। তবে এই পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর ফল তৈরির জন্য সতর্কতা জরুরি। পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকার যে টেকনিক্যাল কমিটি করেছে তাদের অত্যন্ত দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে একটি প্রজš§। বিষয়টি জটিল হলেও তা সমাধানযোগ্য।