ইসির সংশ্লিষ্ট কাজে ভোগান্তির অবসান হোক

10

 

জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্ড। এটি এখন নাগরিক পরিচয়ের একমাত্র মাধ্যম। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, চাকরি, পাসপোর্টসহ সব ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এই জাতীয় পরিচপত্র। এককথায় দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র। কিন্তু অনেক কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় পাসপোর্ট বানাতে পারছেন না, অনেকে বিদেশ থেকে এসে নবায়ন করতে পারছেন না, এতে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় বিদেশে যেতে পারছেন না, কারো কারো চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন পাচ্ছেন না, কেউবা ব্যাংকের নিয়মের গ্যাঁড়াকলে পড়ে টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না। পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় অনেক হতদরিদ্র ভিজিএফসহ বিভিন্ন ত্রাণ নিতে পারছেন না, বয়স্কভাতা, এমনকি বিধবা ভাতাও নিতে পারছেন না-বলেও অভিযোগ রয়েছে। এনআইডি বিভ্রান্তিতে প্রতিনিয়ত এরকম অসংখ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, আইডি কার্ডে তথ্য ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য একজন কার্ডধারী (প্রবাসী) বান্দরবানের একটি উপজেলা নির্বাচনী কার্যালয়ে যান, ওখানে সমাধান না হওয়ায় বান্দরবান জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সর্বশেষ ভুক্তভোগীকে আসতে হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা নিবাচনী কার্যালয়ে। তাতে লাইনে দাঁড়িয়ে দিন শেষ করলেও কর্তার ঘড়ির কাঁটায় ৫টা অতিক্রম করায় বেচারা সেদিন আর এনআইডি সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেন নি। এ ধরনের অসংখ্য কার্ডধারীকে প্রতিদিন হায়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই ভুলের জন্য নির্বাচন অফিসের কর্মীরাই দায়ী। তাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। শুধু তাই নয়, নির্বাচন অফিসের এনআইডি সংশোধনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে সাধারণ মানুষ যেভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তাতে নির্বাচন অফিসের প্রতি আস্থা উঠে যাচ্ছে। অনেকেই নির্বাচন অফিসের প্রতি বিরক্ত হয়ে দালালের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংশোধনের পথ ধরেছেন। এজন্য অনেক টাকাও গুনতে হচ্ছে । ভুল ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য দেশের আনাচে-কানাচে একশ্রেণির দালাল তৈরি হয়েছে। যারা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে সহজ-সরল মানুষের কষ্টার্জিত হাজার হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন অফিসের নীরবতায় তাদের দুঃসাহস দৌরাত্ম্যের পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের এই ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ভ‚মিকা জরুরি। আমরা লক্ষ্য করেছি, যখন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন ইসির অদক্ষ কর্মীরা তথ্য সংরক্ষণে যে ভুল করেছেন তারই কারণে আজকে নাগরিকদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তি দূর করতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রণে উপজেলা অফিস, জেলা অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগের (এনআইডি) কার কী ক্ষমতা তাও নির্ধারিত করা হয় প্রজ্ঞাপনে। তারপরও বিড়ম্বনা কমছেই না। তবে এর জন্য শুধু নির্বাচন অফিসকে দায় করে পার পাওয়া যাবে না, নাগরিকদের দায় রয়েছে।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রতিবারই তথ্য সংগ্রহের সময় উভয়পক্ষের গাফিলতির কারণে তথ্যের গরমিল থাকছে। এসব ক্ষেত্রে নামের বানান, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার নামের বানান নির্ভুল করা যায়নি। মাঠপর্যায়ের অনিয়ম পর্যবেক্ষণ করে ভোটার তথ্য সংগ্রহ ফরমে পিতা-মাতার নাম ও বর্তমান ঠিকানা ভুল করা এবং আইডি নম্বরের ঘর খালি রাখা, শনাক্তকারীর স্বাক্ষর না থাকা, সুপারভাইজার ও যাচাইকারীর নাম ও স্বাক্ষর না থাকা, আঙুলের অস্পষ্ট ছাপ, ইংরেজি ও বাংলা বানানে অসামঞ্জস্যসহ ২১টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। দায়ী মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে আজ পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে অনেক নাগরিকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে এনআইডিতে। তারা সেবা নিতে এসে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এনআইডি এখন জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও এনআইডি প্রয়োজন। ভুলত্রুটি সংশোধনে সহজ সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে। দীর্ঘসুত্রতা দূর করতে হবে। সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে আরো যা যা উদ্যোগ প্রয়োজন, তা গ্রহণ করে দ্রুত কার্যকর করতে হবে।