ইসলাম কর্মহীন ধর্ম নয়

3

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী

মহান আল্লাহ পাক সব মানুষকে সবকিছু সমান দেননি, সময় সব মানুষের জন্য সমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চব্বিশ ঘণ্টায় দিন একজন সাধারণ মানুষের জন্যও চব্বিশ ঘন্টায় দিন। সময়কে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক কাজ সম্পাদন করার নামই ‘টাইম ম্যানেজম্যান’। মুসলমানদেরকে সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ পাক সময়ের শপথ গ্রহণ করেছে। সময়কে গুরুত্ব না দিলে একসময় ‘সময়’ চরম প্রতিশোধ নেয়। সময়কে গালি না দিতে আল্লা পাক চরম ভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সময়কে গালি দিও না, আমি নিজেই সময়’। পবিত্র ইসলাম ধর্ম কর্মকে গুরুত্ব দিয়েছে অধিক। বেশি করে কর্ম সম্পাদন করতে হলে সময়কে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। সময়কে গুরুত্ব না দিলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়, ফলে মানুষ অভাবগ্রস্ত হয় এবং অভাবের কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানুষ অপমানিত হয়। অভাবের কারণে অনাচার, পাপ, চুরি, ডাকাতি অনেক বৃদ্ধ পায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দরিদ্র্যতা মানুষকে কুফরির দিকে টেনে নেয়, অথচ আজ পৃথিবী নামক গ্রহটিতে দরিদ্রের হার মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ পাক তো মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে খনিজ সম্পদ কম দেনন।ি সে সম্পদ মুসলমানদের অশিক্ষার কারণে লুপিট হয়েছে হচ্ছে।
আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি চাইলে বেকারত্ব দূর করতে হবে। অধিক সাহায্যে নয় যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাতে কাজ ধরিয়ে দিতে হবে। যুব সমাজ দাঁড়িয়ে গেলে পুরো দেশটাই দাঁড়িয়ে যাবে।
যে ইসলাম ধর্ম অবিচার পাপাচার হতে মানুষকে মুক্তি দিতে এসেছে সে ধর্মের অনুসারী হয়ে পাপাচার অবিচার করছি। পূর্বের নবী (আ.) গণের উম্মতকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক একটি অপরাধের জন্য যেমন, শুয়াইব (আ.)’র উম্মত ওজনে কম দেওয়ার কারণে , লুত (আ.) উম্মতকে সমকামিতার কারণে ধ্বংস করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা তাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি পাপাচার ব্যবিচার করে চলছি কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে দয়াপরবশ হয়ে গজব নাজিল করছে না। কারণ তাঁর প্রিয় হাবীবকে তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ জগত সমূহের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন, আজ আমরা তাঁর উম্মত হিসেবে যে রহমতের অংশীদার।
পৃথিবীর অনেক ধর্মগুরু আছে যাদের কাজ করা নিষেধ। তাদের অনুসারীরা কাজ করবে আর তারা বসে বসে খাবে। ইসলাম ধর্মে কাজ না করে ধর্মগুরু হওয়া যায় না। প্রত্যেক নবী রাসুল (দ.)কে হালাল পেশায় রুজি অর্জন করতে হয়েছে। হযরত আদম (আ.) প্রথমে কাপড় তৈরী অতঃপর কৃষিকাজ করেছিলেন। তিনি জান্নাত হতে অনেক ধরনের বীজ নিয়ে এসে পৃথিবীতে চাষাবাদ করেন। হযরত নুহ (আ.) কাঠের ব্যবসা করতেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.) দর্জির কর্ম করতেন। হযরত নুহ (আ.) এবং হযরত সালেহ (আ.) ব্যবসা করতেন। হযরত শোয়ায়ের (আ.) গবাদি পশু পালন করতেন এবং পশুর দুধ বিক্রয় করে জীবন নির্বাহ করতেন।
হযরত লুত (আ.) কৃষি কাজ করতেন। হযরত মুসা (আ.) ছাগল পালন করতেন। হযরত দাউদ (আ.) যুদ্ধের পোশাক তৈরী করতেন। হযরত সোলাইমান (আ.) বিশাল সাম্রাজ্যের বাদশাহ হওয়া সত্তে¡ও পাখা ও থলে তৈরী করে জীবন ধারণ করতেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসা পরিচালন করতেন। পৃথিবীর মধ্যে এমন নবী রাসুল আগমন করেননি যিনি মেষ চাড়াননি। নিজ হাতে হালাল উপার্জন নবী রাসুল (দ.)দের সুন্নাত। হালাল উপার্জনকে নিন্দা করা তাই মহাপাপ।
উন্নত বিশে^র কোনো রাষ্ট্রের মানুষ কোন কাজকে ঘৃণা করেনা। আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছোট কাজগুলোকে ঘৃণা করি। কাজকে ঘৃণা করে কোন জাতি বড় হতে পারেনি। চুলকাটা, জুতো পালিশ করা, সুইপারদের কাজকে অভদ্রের কাজ মনে করি। যেসব কাজ অভদ্রকে ভদ্র করে পরিবেশকে সুন্দর করে সেসব কাজ অভদ্র হয় কী ভাবে ?
উপার্জণ হালাল হলেই সেটি উত্তম। এটি আমাদের কথা নয়, মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘সবচেয়ে উত্তম খাদ্য হলো নিজ হাতের উপার্জন। হাতের উপার্জন পবিত্র বস্তু। হালাল উপার্জন ফরজের পর ফরজ’। অর্থাৎ নামাজ রোজার পর হালাল উপার্জন করা ফরজ’।
নামাজ রোজার পরে হালাল উপার্জন ফরজ করা হলেও হালাল উপার্জন ছাড়া ইবাদত কবুল হয় না। হাদিসে পাকে ইরশাদ আছে, যিনি যাকাত দিল না তার নামাজ হলো না। অর্থাৎ যাকাত না দিলে সম্পদ হারাম হয়ে যায়। হারাম সম্পদ দেখে নামাজ আদায় করলে করলে সে নামাজ কবুল হয় না। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা হালাল উপার্জন করাবড় কঠিন হয়ে পড়েছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ এমন যুগ আসবে যখন টাকা পয়সা ছাড়া কোন কাজই হবে না’। আমরা বর্তমান সে যুগের কাছাকাছি বাস করছি।
হালাল উপার্জন এমন বড় ইবাদত, যে কাজ দ্বারা বড় বড় ইবাদত সম্পন্ন করা যায়। দান খয়রাত, হজ, যাকাত মসজিদ মাদ্রাসা, সদকায়ে জারিয়া হালাল উপার্জন দ্বারা সম্পন্ন হয়। হযরত ওসমান (রা.) সম্পদের মাধ্যমে জান্নাত ক্রয় করে নিয়েছিলেন। হালাল উপার্জন দ্বারা অনেক বড় অপরাধ হতে ম্ক্তু থাকতে পারে। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, খুনসহ অনেক জঘন্য অপরাধ হালাল উপার্জনের কারণে কমে যায়। তাই কেউ যখন হালাল উপার্জনের পথে বের হয় তখন আমলনামা লিখার কাজে নিয়োজিত দুই ফেরেস্তা বলেন, মহান আল্লাহ পাক তোমার এ কাজে বরকত দান করুক, তোমার উপার্জনকে জান্নাতের ভাÐারে পরিণত করুক এ প্রার্থনার সময় আসমান ও জমিনের সকল ফেরেস্তাগণ আমিন আমিন বলতে থাকেন।
বেকারত্ব অনেক পাপের উৎস। হালাল রিজিক উপার্জন দ্বারা আল্লাহ শুকরিয়া আদায় হয়, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়, পুণ্য কাজের আগ্রহ হয়। মুসলমানদের মুক্তি চাইলে সকলকে কর্মক্ষম হতে হবে। মুসলমানদের বেকারত্ব দূর না হলে, দীনদার সৎ সচ্ছল না হলে মুক্তি আসবে না। মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে যেন মুক্তি দেন। আমিন।

লেখক : কলাম লেখক, রাজনীতিক