অভিনন্দন মাননীয় মেয়র গর্বিত নগরবাসীর মর্যাদা সমুন্নত হোক

14

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর এবং প্রধান বাণিজ্যিক শহর এ চট্টগ্রাম। এখানে রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। সুপ্রাচীনকাল থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হিসেবেই এ নগরীর পরিচয় ছিল। বর্তমান বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবেই সমধিক পরিচিত। এ নগরের ইতিহাস পুরনো। আজ থেকে প্রায় একশত সত্তর বছর আগে এখানে আনুষ্ঠানিক পৌরসভার গোড়া পত্তন হয়। এর প্রায় একশত দশ বছর পর সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হয়। ছোট রাষ্ট্র হিসেবে এখানে রাজ্য বা প্রদেশের সুযোগ নেই তবে স্থানীয় সরকার পরিষদের বৃহত্তর অংশ হিসেবে আছে সিটি কর্পোরেশন। আশির দশক থেকে শুরু করে এ শতকের প্রথম অর্ধশতকে চট্টগ্রামের তিনজন মেয়রকে সরকার প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে নগর শাসনে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়েছিলেন। মধ্যখানে আরো দুইজন মেয়র ছিলেন। নগরবাসীর দাবি সত্তে¡ও সরকার তাদের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা দেয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এ মাসের শুরুতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের চার মেয়রকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, রাজধানীর দুই নগরের অভিভাবক হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী পেলেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। মেয়রদের পদমর্যাদা নির্ধারণ বিষয়ক গেজেট অনুযায়ী তারা স্ব স্ব পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন। গত ৭ আগস্ট এই চার মেয়রকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রী পরিষদের সচিবের এ চিঠির পর চট্টগ্রামের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী এখন থেকে চট্টগ্রাম নগরে নির্বাহী ক্ষমতায় অভিষিক্ত হলেন। সেই সাথে নগরীর সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমে তাঁর অভিভাবকত্ব নিশ্চিত হল। অভিনন্দন মাননীয় মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। আমরা মনে করি, এটি শুধু মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর মর্যাদা নয়, এর সাথে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত ষাট লাখ মানুষের মর্যাদা জড়িত। সরকার মেয়রকে এ পদমর্যাদা দিয়ে মূলত চট্টগ্রাম নগরবাসীকে সম্মানিত করেছে। আমরা এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নগর হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পূর্ণ মন্ত্রী পদমর্যাদা দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু সরকার রাজধানী ঢাকা বিভক্ত দুই সিটির মেয়রকে সেই মর্যাদা প্রদান করলেও চট্টগ্রামকে দেয়া হয় প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা। বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্র ও স্যোসাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
সরকার নতুনভাবে শূন্য থেকে শুরু করেছে, ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের মেয়র পূর্ণ মন্ত্রী মর্যাদা পাবেন এমনটি আশা আমরা করতে পারি। এ মুহূর্তে চট্টগ্রামবাসী নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। কারণ চট্টগ্রামবাসী নানা দুঃখ ও অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হলেও মর্যাদাগত সংকটের কারণে বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয়ের অভিভাবকত্ব করা একধরণের চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সিটি কর্পোরেশনকে সমন্বয়ের অভিভাকত্ব দেয়া হলেও নগরীর অন্যান্য সেবা সংস্থাসমূহ তা গায়ে মাখতেন না। এবার মেয়রের পদটি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসিক্ত হওয়ায় আগের সেই সংকট আর থাকবেনা বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে নগর উন্নয়ন পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অভিমতের উপর বিশ্লেষণ করে বলা হয়, মেয়র মর্যাদা পেয়েছেন সেটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাহী ক্ষমতা দরকার। তবে এ মর্যাদা শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে না হয়ে জনগণের ভোগান্তি কমাতে, দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রামের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবহৃত হলে সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে জনগণ। চট্টগ্রাম নগরবাসী আশা করেন যে, এ বীর মুক্তিযোদ্ধা তার সততা, ব্যক্তিত্ব এবং প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে চট্টগ্রাম নগরীকে কাক্সিক্ষত উন্নয়নের তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।