অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হোক

3

জাতীয় নির্বাচনের মাত্র চার মাসের মাথায় আরো একটি বড় নির্বাচনের দামামা বেজে উঠল। আর তা হলো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের অন্যতম বৃহত্তর স্তর এটি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চার ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী শুরু হবে নির্বাচনি আমেজ। দেশে মোট ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সবকটি উপজেলার নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত তিন দফায় নির্বাচনী তপসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ৮ মে ২০২৪ খ্রি. প্রথম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫০টি উপজেলা পরিষদের। ২১ মে দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত হবে ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে ১১২টি উপজেলার নির্বাচন। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় বাকি উপজেলাগুলোর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে ৫ জুন। মূলতঃ এবারের ঈদ উল ফিতরের বাড়তি আনন্দ ছিল আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে। এবারের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে দলীয় সমর্থন থাকলেও দলীয় প্রতীক থাকছেনা। ফলে উন্মুক্তভাবে যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সুযোগ পাবে। দেরিতে হলেও বিষয়টি সরকারের বোধগম্যে এসেছে, এটিই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও প্রতীক থাকলে দলে যেমন বিভক্তি ও দলাদলি বেড়ে যায়, তেমনি সমাজের যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসেন না। বিগত দুটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে এ বাস্তবতা পলিক্ষিত হয়েছে। দল ও প্রতীকহীন নির্বাচনের মাঠে যে রাজনৈতিক আদর্শের বিশ্বাসী হোক-সকলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে-এতে নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়বে পাশাপাশি নির্বাচনী আমেজও আগের মত ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়। আমরা রক্ষ্য করছি, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে তোড়জোড় শুরু করেছে। যদিও দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক নেই, তবে এ নির্বাচনকে ঘিরে বরাবরের মতো স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের কঠোর নির্দেশনা ও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, কোন কোন এলাকায় স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। মূলত দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং বরাবরের মত দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সমর্থনপুষ্ট নেতা-কর্মীরা অংশ না নেওয়ার ঘোষণা প্রেক্ষিতে এ নির্বাচনেও সরকারদলীয় প্রার্থীদের আধিক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা নিজ বলয়ের নেতা, নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের প্রার্থী করতে উদগ্রিব। আবার সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেননি কিংবা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছিলেন, তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর বাইরেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। এখানে এমপি-মন্ত্রী বা দলীয় প্রভাবশালী নেতারা হস্তক্ষেপ করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে অন্য কথা। নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অনেক এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা ইতোমধ্যেই নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি মাঠ গরম করছেন। কোথাও কোথাও একক প্রার্থী রাখারও জোর চেষ্টা চলছে। উঠেছে বিরোধী পক্ষকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও। আমরা মনে করি, নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই প্রচার-প্রচারণা ও ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানে ইসির কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে ইসি তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। অন্যদিকে, নির্বাচনে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের দলের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। এতে ভোট গ্রহণের দিন দলের অভ্যন্তরেই সংঘাত-সহিংসতা ঘটার আশঙ্কা সত্যে পরিণত হতে পারে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলকে সংযত এবং নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ।