সীতাকুন্ডে শহীদ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীদের স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’

160

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ও শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীদের স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভাস্কর্যটি আগামী মার্চ মাসের ১৬ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং যুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, দিদারুল আলম এমপি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ. সালাম সহ রাষ্ট্রীয় অতিথিবৃন্দ।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সীতাকুন্ড উপজেলার ছোট দারোগারহাট থেকে কুমিরা এলাকায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্ততি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং দেশপ্রেমিক জনসাধারণের সহযোগিতায় ঐ দিন রাত ১০টা থেকে পাক হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই সম্মুখ যুদ্ধ ১২ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়ে ১৭ ডিসেম্বর সীতাকুন্ড পাক হানাদার মুক্ত হয়। বীরত্বপূর্ণ এই যুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী অসংখ্য সদস্য শহীদ হন। সীতাকুন্ড সদরে চন্দ্রনাথ মন্দিরগামী এলাকায় মিত্রবাহিনীর পঞ্চাশের অধিক শহীদ জওয়ানের মরদেহ দাহ করা হয় এবং মুক্তিবাহিনীর শহীদদের বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় দাফন করা হয়। উপজেলার ছোট দারোগারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে ইতিমধ্যে কুমিরা মহাসড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন ‘স্মৃতি ৭১’ নামে কয়েকটি ভাস্কর্য গড়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ভারতীয় মিত্র বাহিনীদের সম্মান জানাতে প্রথমে পৌরসদর গজারিয়া দিঘির পাড়ে তৎকালীন ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনার ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ.সালাম এই মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নামে ভাস্কর্যটি ভিত্তি প্রস্তর করেন। কিন্তু ঐ স্থানে পরবর্তীতে জেলা পরিষদের নিয়োগকৃত ঠিকাদার কাজ করতে গেলে আপত্তি আসে। এরপর দীর্ঘ এক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর একাধিক মতবিনিময় করে বর্তমানে দুই নং ব্রিজ সংলগ্ন সীতা মন্দিরের সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি উদ্বোধনের আগে চন্দ্রনাথধামে আগত পর্যটন ও শিব চতুর্দশী মেলা আসা পূণার্থীদের নজর কাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আ.ম.ম দিলশাদ জানান, তিন দফায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নামে ভাস্কর্যটি ১৯৭১ সালে শহীদ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীদের সম্মান জানানোই মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য সীতাকুন্ডের ছোট দারোগারহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণ হারান। শহীদদের এই আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্্র শ্রদ্ধা জানাতে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামের এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে