বাঁকখালীর তীরে বর্জ্যরে পাহাড় বাঁকখালীর তীরে বর্জ্যরে পাহাড়

21

হাইকোর্টের কঠোর নির্দেশ সত্বেও কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট এলাকার বাঁকখালী নদীর তীরে বর্জ্য ফেলা অব্যাহত রেখেছে পৌরসভা। ইতোমধ্যে পৌরসভার ফেলা বর্জ্যে বিস্তীর্ণ তীর ভরাট হয়ে গেছে। সম্প্রতি সময়ে ফেলা বর্জ্যে পাহাড়সম অন্তত ৭/৮টি বর্জ্যের স্তূপ হয়ে গেছে। এসব বর্জ্যে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় লোকজনের উপর।
কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রামু চেইন্দায় কক্সবাজার পৌরসভার যে ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে সেখানে দৈনিক মাত্র ১২ টন বর্জ্য রাখা যায়। তাও পচনশীল কাঁচা বর্জ্য। কিন্তু পলিথিন, প্লাস্টিকসহ অপচনশীল আরো দৈনিক অন্তত ১২০ টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কস্তুরাঘাট এলাকার বাঁকখালী নদীর তীরে।
বর্জ্য ফেলার বিকল্প আর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নিরুপায় হয়ে পৌরসভা এসব বর্জ্য ফেলছে বলে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট লোকজন দাবি করেছেন। পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা (কনজার্ভেন্সি পরিদর্শক) কবির হোসাইন জানান, রামুর চেইন্দায় স্থাপিত পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনটিতে দৈনিক মাত্র ১২ টন পচনশীল কাঁচা বর্জ্য রাখা সম্ভব হয়। এই ১২টন বর্জ্য প্রক্রিয়াজত করে কম্পোস্ট বানানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ‘মেগা অর্গানিক’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই প্রক্রিয়াজাত করণের দায়িত্বে রয়েছে। তারা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় হোটেল-মোটেল জোন থেকে এই ১২টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। কবির হোসাইন আরো জানান, পৌরসভায় দৈনিক প্রায় ১৩০ টন নানা ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয়। পচনশীল মাত্র ১২টন বর্জ্য চেইন্দার ডাম্পিং স্টেশনের নেয়া হলেও দৈনিক আরো অন্তত ১২০ টন বর্জ্যের সবটুকু কস্তুরাঘাট এলাকায় ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য ফেলার অন্যকোনো স্থান বা স্টেশন না থাকায় সব বর্জ্য কস্তুরাঘাট এলাকায় ফেলা হচ্ছে।
কস্তুরাঘাট ও বিআইডাব্লিওটিএ স্টেশন সংলগ্ন উত্তর পাশে বাঁকখালী নদীর তীরে দীর্ঘদিন ধরে ফেলা হয়েছে পৌরসভা বর্জ্য। এতে ইতিমধ্যে নদীর অংশের বিস্তীর্ণ স্থান ব্যাপকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য না ফেলতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো সময় তা গ্রাহ্য হয়নি। এভাবে বছরের পর বছর সেখানে বর্জ্য ফেলে যাচ্ছে পৌরসভা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর ওই অংশে সম্প্রতি সময়ে ব্যাপকহারে বর্জ্য ফেলা হয়েছে। এতে স্থান সংকুলনা না হওয়ায় সমতল পেরিয়ে এখন বিশাল স্তূপ করে বর্জ্যগুলো রাখা হচ্ছে। এভাবে পাহাড়সম ৭/৮টি পাহাড় বর্জ্যের স্তূপ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পৌরসভার বর্জ্যের ডাম্পারে করে অব্যাহতভাবে ফেলা হচ্ছে। একটি স্কেবেটর দিয়ে তা স্তূপ করা হচ্ছে।
পবিবেশবাদী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, জলবায়ু পরির্বতনের প্রভাবে কক্সবাজার বেশ পরিবেশগত ঝুঁকিতে রয়েছে। তার সাথে অভ্যন্তরীণ নানা অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডেও আরো ব্যাপকভাবে পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে বাঁকখালী নদীতে বর্জ্য ফেলা বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। কক্সবাজারকে বাঁচাতে হলে এই বিধ্বংসী অবস্থান থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, চেইন্দার ডাম্পিং স্টেশনের এতো বিপুল বর্জ্য ফেলা যাচ্ছে না। শহরের এসএম পাড়ায় যে ডাম্পিং স্টেশন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তা সম্পন্ন হতে আরো সময় লাগবে। এটা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য জাইকা অর্থায়ন করবে। শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কস্তুরাঘাট এলাকায় বর্জ্য ফেলতে হচ্ছ।