কোরবানির বর্জ্য অপসারণে শতভাগ সফল চসিক

23

মেয়র প্রার্থী হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল চট্টগ্রামকে গ্রিন সিটি ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করা। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বেশ তৎপরতা শুরু করেন তিনি। মেয়র হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল নগরীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখা বিলবোর্ডগুলো অপসারণ। বিলবোর্ডমুক্ত নগরী উপহার দিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হন মেয়র আ জ ম নাছির। এরপর নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। এরমধ্যে নগরীর অধিকাংশ ডাস্টবিন তুলে দেন। দিনের বেলা নয়, রাতের বেলাতেই নগরীর বর্জ্য অপসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রায় দুই হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মিকে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে রাতেই পুরো নগরী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করারও উদ্যোগ নেন মেয়র নাছির। এছাড়াও ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। এরফলে এক সময়ের নোংরা ও দুর্গন্ধময় চট্টগ্রাম নগরী সত্যিকার অর্থেই দুর্গন্ধবিহীন পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হয়। সেইসঙ্গে নগরীকে গ্রিন সিটি ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করার অংশ হিসেবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এভাবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনে এবং নতুন নতুন এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প গ্রহণ করে বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে সত্যিকারের গ্রিন সিটি ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করে চলেছেন মেয়র নাছির।
এবারের ঈদ উল আযহায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণেও শতভাগ সফলতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ঈদের দিনেই অপসারণ করা হয়েছে অধিকাংশ কোরবানির বর্জ্য। ঈদেও পরের দিনও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কোরবানির বর্জ্য অপসারণে কাজ করেছে। এবারের কোরবানির বর্জ্য অপসারণে চসিকের ২৭৩টি গাড়ি ও নিজস্ব চার হাজার সেবক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছে বলে জানা গেছে। এবার শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে বিভাগীয় সেল খোলা হয়। কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে গঠিত সেলের অধীনে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে পরিচ্ছন্ন বিভাগ। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডকে চারটি সেলে ভাগ করে চার জন কাউন্সিলরকে সেল পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। সেইসঙ্গে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সরাসরি মনিটরিং করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ঈদের দিন বিকালে নগরীর আলমাস সিনেমা হলের মোড় থেকে কাজীর দেউড়ি হয়ে লাভলেইন মোড়, নিউমার্কেট, সদরঘাট ও মাদারবাড়ি এলাকায় চলমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন মেয়র। এ সময় তিনি সড়কের ডাস্টবিনগুলোতে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে নিয়োজিত পরিচ্ছন্ন কর্মিদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেন তিনি।
এদিকে এবারের ঈদে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে চসিকের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ফেলে যাওয়া লক্ষাধিক পঁচা চামড়া অপসারণ নিয়ে। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে পঁচে যাওয়া চামড়ার স্তুপ রেখে চলে যায়। চরম দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে ওই পঁচা চামড়াগুলো থেকে। এই লক্ষাধিক পঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ২০০ শ্রমিক আটটি পে-লোডারের সাহায্যে ৩২টি ট্রাকে ৯০ ট্রিপে এক লক্ষাধিক পঁচা চামড়া অপসারণ করে। এরমধ্যে নগরীর আতুরার ডিপো-হামজারবাগ এলাকা থেকে এক লাখ, বহদ্দারহাট থেকে নয় হাজার ও আগ্রাবাদ থেকে ১২ হাজারেরও বেশি পঁচা চামড়া নগরীর হালিশহর আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরের আবর্জনার ভাগাড়ে ফেলা হয়। অপসারণের পর পঁচা চামড়ার স্তুপের জায়গায় এক হাজার কেজি বিøচিং পাউডার ছিটিয়ে দেয়া হয় চসিকের পক্ষ থেকে। ঈদের আগের দিন অবশ্য নগরীর বাসায় বাসায় গিয়ে ব্লিচিং পাউডার ও বর্জ্য অপসারণের জন্য পলিব্যাগ দিয়েছিল চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মিরা। এবার নগরবাসীও যত্রতত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলেনি। তাই কোরবানির বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মিদেরও তেমন বেগ পেতে হয়নি। এ কারণে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে চসিক যেমন প্রশংসার দাবিদার, তেমনি চসিককে সহযোগিতা করে ধন্যবাদ পেতে পারেন নগরবাসীও।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কার্য নির্বাহী পরিষদ সদস্য, বিএফইউজে