কক্সবাজারের পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের ঘুম ভাঙ্গছে না

36

বর্ষা আসার সাথে সাথে বৃষ্টি নামে। টানা বৃষ্টির সাথে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনাও। প্রবল বৃষ্টির সাথে পাহাড় ধসের আতংক ও মৃত্যু পাহাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে ভর করলেও তারা রয়েছে অনড়। আবদু সালাম দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে বসবাস করছেন শহরের বৈদ্যঘোনাস্থ জাদি পাহাড়ে। ভারী বর্ষণের ফলে একাধিকবার পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও এখনো যাবার কোন জায়গা না পেয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পুত্র, পুত্র বধূ ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে আসছেন আবদু সালাম। শুধু আবদু সালাম নয় তার মত হাজার হাজার মানুষ রয়েছে যারা শহরে বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অথচ প্রতিবছরই পাহাড়ি এলাকাগুলোতে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে প্রাণ যাচ্ছে অনেক মানুষের। পাশাপাশি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পদহানিও। সর্বশেষ গত বছর শহরের লাইট হাউজ, ঘোনারপাড়া, কলাতলীসহ একাধিক স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা যায় কয়েকজন। বছরের পর বছর পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়লেও বোধোদয় হচ্ছে না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের। জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পৌর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের পক্ষ থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে রাজি হয়না বেশির ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা।
সরেজমিনে শহরের ঘোনারপাড়া, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, ইসলামপুর, জাদিপাহাড়, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশা ঘোনা, মোহাজের পাড়া, লাইট হাউসসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে এর বাস্তব চিত্র। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমের লাগাতর বৃষ্টিতে ফের প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রচÐ বৃষ্টি হলে যে পাহাড় ধসে প্রাণহানি হবে তা নয়, পাহাড় কাটার ফলে অল্প বৃষ্টিতেও অনেক সময় তার প্রতিফলন পেতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা। তা তারা জানে, কিন্তু তবুও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বছরের পর বছর বসবাস করে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিংসহ বিভিন্ন ভাবে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও এবছর তেমন কোন উদ্যোগ চোখে না পড়লেও শীঘ্রই উদ্যোগের কথা জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার বলেন, সাম্প্রতিক সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। বর্ষা মৌসুমেও পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন-পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে থাকে বনবিভাগ। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ায় তারা সরে আসে না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম মাহফুজুর রহমান বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদি বৃষ্টি বৃদ্ধি পায় তাহলে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।