‘ছউন গরি হইর ইলেকশন আর গইত্তাম ন’

55

রাহুল দাশ নয়ন

লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মো. জহির উদ্দিন। গতকাল অনুষ্ঠিত তৃণমূলের বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকলেও তাকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রাখে আওয়ামী লীগ। এতেই বুঝা যায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার শাস্তি হিসেবে এবারো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন জহির। জহিরের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা নেতারা এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে দলটি। এ ধাপে চট্টগ্রামে ৩৭ ইউপিতে নির্বাচন হলেও সেখানে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন পাননি। তবে বিদ্রোহীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, তৃণমূলের সুপারিশ দেখেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। যে ইউনিটে নির্বাচন হবে তার উপজেলা ও জেলা কমিটির সুপারিশের তালিকা পাই। এর বাইরেও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন ও জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন বোর্ড সমস্ত তথ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অনেক সময় কিছু অভিযোগ পাই। যারা ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন অর্থাৎ নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এবার আমরা বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দিচ্ছি না। যারা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করবে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তও পর্যায়ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে আসবে। তিনি বলেন, মনোনয়ন পেতে অনেকেই ভুল তথ্য দেন, তথ্য গোপন করেন। যাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অভিযোগ আছে তাদেরকে পরিহার করতে চাই। প্রতিজন আগ্রহী প্রার্থীর সঠিক তথ্য যেন কেন্দ্রে পাঠানো হয় তা নিশ্চিত করতে দপ্তর ও সাংগঠনিক টিমকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যায়, আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ১৩, হাটহাজারীর ১৩ ও রাউজানের ১৪ ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২১ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হবে। এরপরেই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হবে। উত্তর জেলায় নির্বাচনী আমেজ ফিরলেও বসে নেই দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেয়া শুরু করেছে সংগঠনটি। তারা গত সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন উপজেলায় সফর করে তৃণমূলের বর্ধিত সভা করে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ায় তৃণমূলের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, এ দুটি সভায় সকল ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব সভায় জেলা নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন না করার শপথও করিয়েছেন।
সাক্ষাতকারকালে জেলা নেতাদের কাছে কি বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন কিছুটা অভিমানের সুরে বলেন, ‘ছউন গরি হইর আর ইলেকশন গইত্তাম ন’-। (শপথ করে বলছি আর ইলেকশন করব না) একথা বলেছি।
লোহাগাড়ার বর্ধিত সভায় উপস্থিত হয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি বলেছেন, ‘দলের বাইরে গিয়ে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতবারের বিদ্রোহীরা কেউ এবারো মনোনয়ন পাবেন না।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা কাউকে মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আমরাও তাদের নাম পাঠাবো না। তৃণমূলের বর্ধিত সভায় বিদ্রোহীদের বিষয়ে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে যে তালিকা পাওয়া যাবে সেটিই আমরা সুপারিশ আকারে পাঠাবো। এরপরেও কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪৫ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করেছিলেন। সে নির্বাচনে বিদ্রোহী হিসেবে কেউ কেউ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবার বিএনপির প্রার্থীদের কাছে দলীয় প্রার্থীও পরাজিত হয়েছেন কয়েকটি ইউনিয়নে। এসব বিবেচনায় নিয়ে এবার আগেভাগেই তৃণমূলে বিদ্রোহী দমানোর মিশনে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এরপরেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা গোপনে ঘর গুছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় দলে বিশৃঙ্খলা বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জহির উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘নৌকা যে পাবে তার পক্ষে কাজ করতে জেলা নেতারা তৃণমূলের বর্ধিত সভায় বলেছেন। কিন্তু আমি গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বর্ধিত সভায় আমার মতামত চাওয়া হয়নি। তবে আমার নাম কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে পাশে বিদ্রোহী লিখতে পারে। মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচন করবো কিনা তা সময়ে বলবো।’
বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘আমার নাম গতবার কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। সেখানে যেহেতু নাম যায়নি আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হয়েছি। যাদের নাম যাওয়ার পরেও নির্বাচন করেছেন তারাই তো বিদ্রোহী। যেখানে নামই যায়নি সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হলাম কিভাবে। প্রার্থী বাছাই সঠিক না হওয়ার ফলাফল হচ্ছে আমার ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীই চেয়ারম্যান হয়েছেন।’