জমির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে নকশা অনুমোদন?

21

সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে কিভাবে স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সেটা জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়। পরীর পাহাড়ে আইনজীবী সমিতির স্থাপনার বিষয়ে এ ব্যাখা চেয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়য়ের ‘উন্নয়ন অধিশাখা-১’ এর উপসচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিব স্বাক্ষরিত পত্রে আগামি সাতদিনের মধ্যে ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ৬ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র দেয়া হয়েছিল। মূলত ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এর নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে অপরিকল্পিত অনুমোদনহীন স্থাপনাসমূহ অপসারণ’ প্রসঙ্গে দেয়া সে পত্রের আলোকে সিডিএ’র কাছে এ ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
উপসচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিব স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পরীর পাহাড়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত জমিতে জেলা আইনজীবীদের ৫টি স্থাপনা নির্মাণের জন্য কিভাবে সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে; বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখা আগামি ০৭(সাত) কার্যদিবসের মধ্যে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’।
পত্রে আরো বলা হয়- ‘বিষয়টি বর্তমানে বহুল আলোচিত এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে; এছাড়া জমির মালিকানা নিশ্চিত না হয়ে নকশা অনুমোদনের কোনো কর্তৃত্ব কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই’।
এ বিষয়ে জানতে সিডিএ’র চীফ টাউন প্ল্যানার শাহিনুল ইসলাম খান বলেন, আইনজীবী সমিতি আমাদের কাছে জায়গা বরাদ্দের কাগজ দিয়েছিল, সে আলোকে আমরা অনুমোদন দিয়েছিলাম। এখন জায়গার মালিকানা নিশ্চিত করা সেটা আমাদের কাজ না। আমাদের কাছে যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে যদি কোনো গ্যাপ থাকে বা কাগজ যথাযথ না হয়ে থাকে; তখন আমরা অনুমোদন বাতিল করবো। ডিসি সাহেব জমির মালিক, ওনারা কতটুকু বরাদ্দ দিয়েছিল সেটা ওনারা নিশ্চিত করবেন।
তিনি বলেন, কি ধরণের ব্যাখা চাওয়া হয়েছে সে চিঠি আমি পাইনি। আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য চাইতে পারেন, সেগুলো আমরা সরবরাহ করবো।
প্রায় ১৩০ বছরের পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম আদালত ভবন স্থাপন করা হয়। এই আদালত পাড়া এলাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের মতবিরোধ ছিল অনেক আগে থেকে। তবে সেটি প্রকাশ্যে আসে ২০১৩ সালে। সে সময় কোর্ট হিলের প্রবেশমুখে গেট নির্মাণ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ তৈরি হয়। যেটি সে সময় আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরবর্তীতে তারা সমঝোতার মাধ্যমে গেটের নামকরণ করেন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কোনো বিরোধ প্রকাশ্যে না আসলেও অনেকটা শীতল সম্পর্ক চলতে থাকে।
বর্তমানে এখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন, আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় আছে। এগুলো ছাড়াও এর চারপাশে অপরিকল্পিত ও অনুমোদনহীন বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। আইনজীবী সমিতি পরীর পাহাড়ে নতুন করে দু’টি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর আবার শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
সমিতির এ উদ্যোগের ব্যাপারে অবহিত হয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অমান্য করে পরীর পাহাড় এলাকায় কোনো ধরণের পরিবেশ বিধ্বংসী দখলবাজি, খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজে সহযোগিতা প্রদান দন্ডনীয় অপরাধ এবং এহেন কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো’।
প্রশাসনের এই বিজ্ঞপ্তির পরও আইনজীবী সমিতি তাদের নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ৮ সেপ্টেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভায় পরীর পাহাড় থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে দাবি উত্থাপন করা হয়। সভায় বলা হয়, আইনজীবীদের তীব্র চেম্বার সংকট নিরসন করতে প্রস্তাবিত দু’টি ভবনের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা থেকে পরীর পাহাড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আবারও সরকারের কোনো সংস্থার অনুমোদন ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ ও ‘একুশে আইনজীবী ভবন’ নামে দুইটি ১২ তলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এবং সেখানে ৬শ’টি চেম্বার বরাদ্দে আইনজীবীদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে মোট ১২ কোটি টাকা আদায় করেছে।
পরীর পাহাড়ে জেলা প্রশাসকের নামে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১ দশমিক ৭২ একর জায়গা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিবেদনটিতে জানান হয়, সেখানে আইনজীবী সমিতি চারদিকেই অর্ধশতাধিক অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা করে ভাড়া দিয়েছে। এসব স্থাপনা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। এর কারণে অরাজকতার সুযোগ নেয় অপরাধীরা। এরই সুযোগে ২০১২ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গী হামলাও হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।