চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে করোনা

105

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৪০৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৯১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত জুলাই মাসের ৮ তারিখের পর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৫৫ জনই নগরের, বাকি ৩৬ জন বিভিন্ন উপজেলার। একই সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরে আরও একজন করোনায় মারা গেছেন।
চিকিৎসকরা জানান, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও কঠোর ভ‚মিকা পালন করতে হবে। সেই সাথে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। সিভিল কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীসহ এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা শনাক্ত রোগী এখন ২৫ হাজার ১৯১ জন। এদের মধ্যে মহানগরে ১৮ হাজার ৯৩৮ জন এবং উপজেলায় ৬ হাজার ২১৩ জন রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৩১৯ জন, যাদের ২২৪ জন মহনগরের বাকি ৯৫ জন উপজেলার। অন্যদিকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২১ হাজার ৪৯৭ জন।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, শতকরা হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ। মানুষ সচেতন হচ্ছে না বলেই করোনা পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে শনাক্তের হার বাড়ছে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানায় সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি আটটি ল্যাব ও কক্সবাজারের একটি ল্যাব মিলে এক হাজার ৪০৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯১ জনের। এদের মধ্যে মহানগরে ২৫৫ জন এবং ৩৬ জন বিভিন্ন উপজেলার। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জনের তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-তে বিদেশগামীদের বাধ্যতামূলক করানো টেস্টসহ ৫৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। তাতে করোনা শনাক্ত হয় ২৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয় ১০৪ জনের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
এদিকে নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। নগরীর আরেকটি বেসরকারি ল্যাব শেভরনে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সবগুলোতে করোনা নেগেটিভ আসে। আর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, মে ও জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্তের হার ছিল নমুনা পরীক্ষার প্রায় ২৮-৩০ শতাংশ। জুলাই মাসের শুরুতে তা কমে ১৯-২২ শতাংশে দাঁড়ায়। জুলাইয়ের শেষ দিকে এই হার ১১-১২ শতাংশ ছিল। অগাস্ট মাসের শুরুতে শনাক্তের হার কিছুটা বেশি থাকলেও মাসের শেষ দিকে তা ছিল ১০ শতাংশের মত। সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও কমে সাড়ে পাঁচ থেকে সাত শতাংশের মধ্যে ছিল। অক্টোবর মাসের শুরুতে তা বেড়ে সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশের মত হয়। আর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ আবার দ্রæত বাড়তে থাকে। ২৩ নভেম্বর তা বেড়ে ১৯ শতাংশ হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার শনাক্তের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেল।