ডিন নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীরা বিজয়ী

20

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আট অনুষদের ডিন নির্বাচনে দলীয়-বিদ্রোহী প্রার্থী মিলে সবকটি গেল আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষক সমর্থিত হলুদ দলের ঘরে। তবে তিন অনুষদে হলুদ দল মনোনীত প্রার্থীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে বিদ্রোহীদের জয়ী করেছেন শিক্ষকরা। আর একটিতে হলুদ দলের প্রার্থী না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীই জয় পেয়েছেন। আর বাকী চার অনুষদে হলুদ দল মনোনীতরাই বিজয়ী হয়েছেন।
শেষ সময়ে এসে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের সাদা দল ও বিএনপিপন্থী একাংশের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামে ঐক্য ফিরলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি শিক্ষকদের এই অংশটি।
গতকাল রবিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে চূড়ান্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ।
নির্বাচনের ফলাফল : কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে হলুদ দলের প্রার্থী বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ ১৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী সাদা দলের প্রার্থী ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু নছর মুহাম্মদ আব্দুল মাবুদ পেয়েছেন ২৭ ভোট।
বিজ্ঞান অনুষদে ৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী এই অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম পেয়েছেন ৩১ ভোট এবং হলুদ দল মনোনীত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক বেনু কুমার দে পেয়েছেন ২৮ ভোট।
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এসএম সালামত উল্ল্যাহ ভূঁইয়া ৪৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন ২৮ ভোট। বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় গত ৪ ফেব্রূয়ারী দলটির মনোনীত প্রার্থী হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ সালাউদ্দিন নিজেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়েছিলেন।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা না থাকায় হলুদ দলের প্রার্থী রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীকে গত ৪ ফেব্রূয়ারী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। আইন অনুষদে ১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী হলুদ দলের প্রার্থী আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা পেয়েছেন আট ভোট।
জীববিজ্ঞান অনুষদে ৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ দলের প্রার্থী ফার্মাসী বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হোসাইন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল পেয়েছেন ২৬ ভোট।
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদ মোস্তফা। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী হলুদ দলের প্রার্থী একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম পেয়েছেন ১৬ ভোট।
মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদে ১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ দলের প্রার্থী ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ-উন-নবী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাদা দলের প্রার্থী মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. এম. মারুফ হোসেন পেয়েছেন সাত ভোট।
এদিকে দল মনোনীত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয়কে দলটির স্টিয়ারিং কমিটির দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষকরা। হলুদ দলের ঐক্যের সংকটের পেছনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনপন্থী বনাম আগের প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের রাজনীতি’ কে দায়ী করা হয়েছিল নির্বাচনের আগেই। তবে দল মনোনীত এবং বিদ্রোহী মিলিয়ে ফলাফল সিংহভাগ নিজেদের করে নিয়েছেন আগের প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা। এ বিষয়ে হলুদ দলের দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজী হননি।