চার লাখ টাকার সিএনজি ট্যাক্সি ১৪ লাখ টাকা !

611

বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার ফলে নগরীর বিভিন্ন শো রুমে ‘রিপ্লেসকৃত’ মেট্রোপলিটন সিএনজি চালিত ট্যাক্সি বিক্রি হচ্ছে ১৪ লাখ থেকে সাড়ে ১৪ লাখ টাকায়। অথচ যখন রেজিস্ট্রেশন দিয়েছিলো, তখন সিএনজি ট্যাক্সির দাম পড়তো সর্বোচ্চ চার লাখ ১৫ হাজার টাকার মত। কিন্তু মেট্রো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার ফলে দাম বৃদ্ধি বলে জানিয়েছেন সিএনজি ট্যাক্সি মালিকরা। এতে বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
বিআরটিএ বলছে, নতুন করে কোন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে না বলেই আগের মালিকরাই অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে।
জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দেয়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তবে চট্টগ্রামে ১৩ হাজার সিএনজি ট্যাক্সি রেজিস্ট্রেশনের পর আর অনুমোদন দেয়া হয়নি। এরপর থেকে নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সির চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও অনুমোদন দেয়নি বিআরটিএ।
অন্যদিকে পুলিশ, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও হাইকোর্টের নিলামকৃত ট্যাক্সিগুলো বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করছে প্রায় ২৫ হাজার।
রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র ও কিছু শো রুম মালিক অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ সিএনজি ট্যাক্সি মালিকদের।
নগরীর কয়েকটি শো রুম ঘুরে দেখা গেছে, বাজাজ অটো’র নতুন একটি গাড়ির মূল্য মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যেহেতু বাজাজ অটো ডিলার ছাড়া সরাসরি গাড়ি বিক্রি করেন না। তাই ডিলার থেকে গাড়ি কিনতে খরচ পড়ে চার লাখ টাকার মত। এরপরে আছে রেজিস্ট্রেশন খরচ।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, একটি সিএনজি ট্যাক্সি সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে খরচ হয় ১৩ হাজার ২০৫ টাকা। যার মধ্যে ট্যাক্স টোকেন ২৬৯৭ টাকা, আয়কর ৩০০০, ফিটনেস, ১০৮৭, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ৫৫৫, নম্বর প্লেট ২২৬০, নতুন রেজিস্ট্রেশন ১০২৫, রোড পারমিট ১১০৪ টাকাসহ আরও কিছু টাকা খরচ করতে হয়।
তাহলে চট্টগ্রাম সিএনজি ট্যাক্সিগুলো ঠিকঠাক দামে কিনতে পারলেও ট্যাক্সিগুলোর দাম এত বেশি কেন? এমন প্রশ্ন অনেকের।
নগরীর বার কোয়ার্টার বাদামতলী দিলু মিয়া কোম্পানির শো রুমে গিয়ে দেখা যায়, চট্টমেট্রো থ ১৩-৩৩৫৯ নম্বরের একটি রিপ্লেসমেন্ট করা গাড়ি রাখা হয়েছে। যেটি এখনো রাস্তায় নামেনি। কর্মচারী জানালেন এর দাম ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই সাথে দেড় বছর ধরে চলমান একটি সিএনজি ট্যাক্সির দাম দিচ্ছে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যার নম্বর চট্টমেট্রো থ ১২-৫২২৪। কিন্তু একটি চট্টগ্রাম থ গাড়ি বিক্রি করছে মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামে।
দোকানের মালিক দিলু মিয়া বলেন, মালিকদের কাছ থেকে কিনে আমরা সামান্য কিছু লাভ করে বিক্রি করছি। এখানে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
সুতরাং এতে এটি পরিষ্কার হয় যে, সরকার ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে সিএনজি ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়াতে হঠাৎ এ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আগের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত মালিকরা। তবে স্ক্র্যাপ করা সিএনজি ট্যাক্সির মালিক স্ক্র্যাপ করার দুই বছরের মধ্যে গাড়ি বিক্রি করতে পারবে না বলে একটি হলফনামা দেয় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে। এতে অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বিআরটিএ যা ব্যবস্থা নিবে, তা নিতে বাধ্য থাকবেন বলে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন।
সিএনজি ট্যাক্সির মালিক মহিউদ্দিন বলেন, একটি পুরাতন গাড়ি যদি কিনতে যান, তাহলে আট থেকে নয় লাখ টাকার নিচে কেউ বিক্রি করবে না, কারণ নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না দেওয়াতে পুরাতন গাড়ির মূল্য বেড়ে গেছে। সেগুলো স্ক্র্যাপ করাতে গেলে ইঞ্জিন নম্বর চেসিস নম্বর সঠিক থাকলেও ২০ হাজার টাকা দালালকে দিতে হয়। আবার ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বরে ঘষামাজা থাকলে দিতে হয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আমাদের মধ্যে যার থেকে যেভাবে পেরেছে, সেভাবে টাকা নিয়েছে দালালরা। তা নাহলে স্ক্র্যাপ করতে দেয়নি। স্ক্র্যাপ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা চলে যায়। তাহলে গাড়িগুলোর মূল্য ১৩-১৪ লাখ টাকা হবে না কেন? যদি ঠিকমত রেজিস্ট্রেশন দিতো তাহলে এমনটি হতো না।
সিএনজির মালিক সালাউদ্দিন বলেন, সিএনজি ট্যাক্সির দাম বেশি হলেও এখন সবাই নিয়ে নিচ্ছে। ধরুন, আমি যদি ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখি, তবে ব্যাংক আমাকে প্রতিমাসে সুদ দিবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তাহলে আমি যদি একই টাকা দিয়ে একটি সিএনজি ট্যাক্সি কিনে নিই, তবে সেটি আমাকে প্রতিমাসে হালালভাবে দিবে ২৭ হাজার টাকা (প্রতিদিন ৯০০ টাকা করে)। তাহলে আমি যদি হালালভাবে ২৭ হাজার টাকা পাই, তবে খারাপ কোথায়? বর্তমানে যাদের কালো টাকা রয়েছে, তারা সবাই বেশি দাম দিয়ে সিএনজি ট্যাক্সি কিনছেন। ফলে নতুন করে সিএনজি ট্যাক্সি কেনা আমাদের মত ব্যবসায়ীদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) তৌহিদুল হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, গাড়ির মালিক এবং চালকরাই সিএনজি ট্যাক্সিগুলোর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে বিআরটিএ’র কোন সম্পৃক্ততা নেই। যদি নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখন আমরা নতুন করে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করবো।