জমে উঠেছে পশুর হাট

104

আর মাত্র তিনদিন পর অর্থাৎ কাল, পরশু বাদে সোমবারই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা। দেয়া হবে পশু কোরবানী। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে নগরীর ৮টি পশুরহাটসহ জেলার বাজারগুলো এখন জমজমাট। পুরোদমে শুরু হয়েছে বেচাকেনা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে পশুরহাটে ক্রেতারা ভিড় করছেন। কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দের গরু ছাগল। আজ শুক্রবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় আরো বাড়তে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে পশুর কোন কমতি নেই। চাহিদা মোতাবেক পশু রয়েছে সব হাটে। তবে দাম এখনো চড়া বলে জানান ক্রেতারা। ৬০-৭০ হাজার টাকার কমে কোন গরু পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তারা। এ কারণে অনেকে অপেক্ষা করে আছেন দাম কমার।
এবার বাইরের জেলা থেকে চট্টগ্রামে প্রায় দেড় লাখ পশু বাজারে এসে গেছে। ফলে পশুর কোন ধরেেনর ঘাটতি নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীতে এবার মোট আটটি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে দুটি স্থায়ী ও ছয়টি অস্থায়ী। স্থায়ী পশুরহাট হচ্ছে সাগরিকা ও বিবিরহাট। আর অস্থায়ী হাটগুলো হচ্ছে সল্টগোলা রেলক্রসিং হাট, কর্ণফুলী হাট, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, পোস্তারপাড় উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, স্টিলমিল হাট ও কমল মহাজন হাট।
নগরীর বৃহত্তম দু’টি পশুরহাট হচ্ছে সাগরিকা ও বিবিরহাট। চাহিদার অর্ধেকই বিকিকিনি হয় এ দুই বাজারে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশিরভাগ গরু এ দু’টি হাটেই তোলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, পঞ্চগড়, নওগাঁ, রাজশাহী থেকে প্রচুর গরু ছাগল আনা হয়েছে। গত ক’দিনের মত গতকাল বৃহস্পতিবারও ট্রাকে ট্রাকে গরু এসেছে। বাজারের মুখে নামানোর পর সেগুলো হাটে ঢুকানো হয়েছে।
কয়েকটি পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, কখনো ভারী আবার কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও ক্রেতারা বাজারে ঘুরছেন। একটির পর একটি গরু দেখছেন। পছন্দ করছেন, কেউ কিনছেন আর কেউ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
সাগরিকা হাটে দেখা যায়, ভেতরে কোন ধরনের জায়গা নেই। হাটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গবাদি পশুতে ঠাসা। প্রবেশ মুখেও রাখা হয়েছে গরু-ছাগল। বাজারের ভেতরে সড়কের দু’পাশে সারি সারি গরু দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কের উত্তর ও দক্ষিণে খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে শত শত গরু। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ছাগল। মহিষও দেখা গেছে।
হাটে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। গত দু’দিনের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি দেখা গেছে। বেচাকেনাও হয়েছে। মনির আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি ৫০টি গরু এনেছেন। বুধবার সাতটি বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, দাম ধরে রেখে কোন লাভ নেই। তাই অল্প লাভেই ছেড়ে দিচ্ছি। শেষে কি হয় বলা যায় না।
শামীম বক্স নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, তিনি দু’টি গরু বিক্রি করেছেন। দামও মোটামুটি পেয়েছেন। তিনি শুক্রবার থেকে বিকিকিনি আরো কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশাবাদি।
বিবিরহাটেরও একই অবস্থা। দূর দূরান্ত থেকে আসা পশুবাহী ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে গরু নামনো হচ্ছে। দ্রুত নামিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানেও দেখা গেছে গরুভর্তি বাজার। পুরো হাট কানায় কানায় পূর্ণ। একদিকে ছাগল রাখা হয়েছে। বাকি অংশে গরু। এ বাজারেও শুরু হয়েছে বেচাকেনা। ক্রেতারা দরদাম করার পাশাপাশি
কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। এক ঘণ্টা অবস্থানকালে ১০ থেকে ১৫টি গরু বিকিকিনি হতে দেখা গেছে।
কুষ্টিয়া থকে আসা ব্যবসায়ী মিজান বেপারি জানান, তিনি এবার ২৮টি গরু এনেছেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার চারটি গরু বিক্রি হয়েছে। দাম খুব বেশি না হলেও ঠকেননি বলে জানান তিনি।
কর্ণফুলী হাটেও চলছে বেচাকেনা। বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে এ হাট। দূরদূরান্ত থেকে আনা হয়েছে গরু ছাগল।
সিটি করপোরেশনের আওতাধীন অন্য ৫ বাজারেও পশু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাজারেই বিকিকিনি চলছে। হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে আসছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতারা জানান, এখনো পর্যন্ত মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরুর দরদাম হলেও বিক্রি হচ্ছে কম। যা বিকিকিনি হয়েছে তার বেশিরভাগই মাঝারি। কয়েকটা ছোট। ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের গরুর বিকিকিনি চলছে বেশি।
চট্টগ্রাম গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শফিকুর রহমান জানান, এবার চট্টগ্রামে চাহিদা মোতাবেক গর-ছাগল রয়েছে। কোন ধরনের ঘাটতি নেই। দামও খুব একটা বেশি নয়। তিনি বলেন, হাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ক্রেতারাও আসছেন। শুক্রবার বিক্রি আরও বাড়তে পারে।
জানা যায়, এবার চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় স্থায়ী ৬৩টি ও অস্থায়ী ১৪৬টি পশুরহাট রয়েছে। এসব হাটেও বিকিকিনি শুরু হয়েছে। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ জেলার প্রতিটি বাজারেই বেচাকেনা চলছে।