‘৯৯৯ সেবা’ কি যথেষ্ট দ্রুত সাড়া দেয়?

3

জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ৯৯৯। ডায়াল করে পরিস্থিতি জানাবেন, ওরা নিকটবর্তী থানার সঙ্গে আপনাকে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। গত ছয় বছরে নাগরিক জীবন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে কিন্তু সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, প্রক্রিয়াটা একটু দীর্ঘ। ৯৯৯ থেকে থানায় সংযুক্ত করে দেওয়ার পরে ‘অযথা’ প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হয় সেবাপ্রার্থীকে। চাইলে সেসব এড়িয়ে দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু তথ্য অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে তারপর সাড়া দেওয়া হয়। তবে অযৌক্তিক প্রশ্ন ও কালক্ষেপণ হয়েছে মনে হলে অভিযোগ করার পরামর্শ তাদের। ৯৯৯-এর অফিসিয়াল তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ৯৯৯-এ আসা মোট কলের সংখ্যা ৫ কোটি ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৯২৬টি। এর মধ্যে সেবা প্রদানযোগ্য কল ২ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৭২৮টি এবং সেবা প্রদান অযোগ্য কল ৩ কোটি ৩ লাখ ৪৭ হাজার ১৯৮টি। প্রায় ৫৭ শতাংশ কলই সাড়া দেওয়ার উপযোগী নয়। একদিকে অপ্রয়োজনীয় কল আরেকদিকে সঠিক সময়ে সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ। সম্প্রতি কল করে ভালো অভিজ্ঞতা না হওয়ার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি পোস্ট দেখা যায়। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, কোন সেবাতে জরুরি সাড়া দরকার হবে তা নির্ধারিত আছে। ফলে ৯৯৯ থেকে থানায় কল ট্রান্সফার করার পরে বাড়তি কিছু তথ্য দরকার হয়।
সম্প্রতি গুলশানের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তি রাস্তায় সহিংস পরিস্থিতি দেখে ৯৯৯-এ কল দেন। তার মনে হয়েছে, এই অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া বেশ ‘টাইম কনজিউমিং’। তিনি লিখেছেন, ৯৯৯ থেকে যখন নিকটস্থ থানায় কল ট্রান্সফার হলো তখন সেখানের দায়িত্বরত মানুষ আমাকে জেরা করছিল, যখন মারামারি হচ্ছিল তখন সেখানে আমার ভূমিকা কী ছিল। এই যদি হয় কোয়ারির অবস্থা, তাহলে আমার মতো সাধারণ মানুষ দ্বিতীয়বার কল করতে চাইবে না।
জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কী কী ধরনের কল আসে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই নম্বরে ফোন করে আসামি আটক, মাদক কারবারি আটক, নবজাতক উদ্ধার, আত্মহত্যা ঠেকানো, ইভটিজিং ঠেকানো, স্বামীর নির্যাতন থেকে স্ত্রীকে বাঁচানোসহ আরও নানা ধরনের সেবা পাওয়ার বিষয়ে মানুষ জানান। তবে জরুরি সেবা বলতে কী বোঝায় সেটিই জনগণ এখনও বুঝতে পারে না। আনোয়ার সাত্তার বলেন, জরুরি পরিস্থিতি বলতে পাবলিক যা বোঝে সেটা জরুরি নাও হতে পারে। এরকম বহু ঘটনা পাওয়া গেছে যেগুলোকে জরুরি ভেবে সেবা প্রত্যাশীরা কল দিয়েছেন কিন্তু সেগুলোতে সাড়া দেওয়ার সুযোগ তাদের নেই। কোনটা জরুরি সেটার সংজ্ঞা আছে। কোনও জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নিতে পারবে না কিন্তু সেটার জন্য যদি মারামারি হয়ে যায় তখন তারা পদক্ষেপ নেবেন।
থানা থেকে রেসপন্স করলে একটু সময় নেয় ও অযৌক্তিক প্রশ্ন করা হয় বলে সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করি রেসপন্স টাইম যত কমানো যায়। কারণ তাতে ভরসার জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু বেসিক ও জরুরি কিছু প্রশ্নের উত্তর সেবাপ্রত্যাশীকে দিতে হবে। তা না হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ও প্রয়োজনীয় সাড়া দিতে দেরি হবে। যিনি ঘটনার মধ্যে আছেন তিনি যদি আশা করেন টেলিফোনের অপর প্রান্তের জন তার কয়েকটা কথা শুনেই সব বুঝে যাবেন, সেটা ঠিক না। তবে যদি এ ধরনের অভিজ্ঞতা কারও হয়, তবে প্লিজ অভিযোগ করুন, জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার আওতায় এই ৯৯৯ সার্ভিস চালু হয়। সাধারণত পুলিশি সহায়তা, জরুরি পুলিশি সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স- এই চার ধরনের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। মোট ১০০টি ডেস্কের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয় ৯৯৯-এর মাধ্যমে। এই সেবা খাতে জনবল রয়েছে সাড়ে চারশত।