৮ হাজার টাকায় ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসাসেবা

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারির ভয়াবহ সময়ে চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের জন্য রোগী ও স্বজনদের হাহাকার-আহাজারি দেখেছে চট্টগ্রামবাসী। একটা আইসিইউ বেডের জন্য হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে হাহাকার করেছেন রোগীর স্বজনরা। সেই সময়ে আইসিইউতে একটি সিটের জন্য ১৫ থেকে ২০ জন রোগী অপেক্ষা করেছেন। সাধারণ মানুষের এই আহাজারি দেখে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহায়ত্ব প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার ছিল না। মর্মান্তিক ঘটনার করুণ চিত্র সেই সময়ে নাড়া দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট মহলকে।
সেই ভয়াবহতা ও সংকটময় মুহূর্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগণের টাকায় পরিচালিত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক মানের আইসিইউ ইউনিট চালু করেছে। মানুষের অনুদানের ২০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা দেশের বেসকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই আইসিইউতে মাত্র ৮ হাজার টাকায় অন্তত ৫০ হাজার টাকার চিকিৎসা সেবা মিলবে। ৩০ বেডের আইসিইউর পাশাপাশি করোনা বা কোনো জরুরি সময়ে আরো অন্তত ৩০ বেডের আইসিইউ সার্পোট দেয়ার সক্ষমতাও এ হাসপাতালের রয়েছে।গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট সম্প্রসারিত ইন্টেন্সিভকেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, বরাবরের ন্যায় মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতি চট্টগ্রামবাসীর আন্তরিকতা অক্ষুন্ন রয়েছে। যখনই প্রয়োজন হয়েছে, নগরবাসী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা করতে হবে সস্পূর্ণ নিয়মন্ত্রাতিকভাবে। যাতে মানুষ এ হাসপাতালে সেবা পেয়ে উপকৃত হয় এবং সেবা নিতে বারবার এ হাসপাতালকেই বেছে নেয়।
ভূমিমন্ত্রী আরো বলেন, আইসিইউ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় কঠোর পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে, যাতে বাহকের মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে বলে আশ^স্ত করেন।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেলের সেক্রেটারি মো. রেজাউল করিম আজাদ বলেন, করোনায় শ্বাসকষ্টের রোগীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইসিইউ সেবা। আমাদের এখানে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের আইসিইউ ইউনিট। এটি করোনার নতুন ধরন বিএফ সেভেন মোকাবিলায় প্রস্তুত। অবস্থার প্রেক্ষিতে আরও শয্যা বাড়াবো।
আইসিইউ ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, কম খরচে সাধারণ মানুষ এখানে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। চালু হওয়া আইসিইউ ইউনিট আন্তর্জাতিক মানের।
কর্তৃপক্ষ বলছে, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককের আদলে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো চালু হওয়া আইসিইউ ইউনিটে ডায়ালাইসিস সেবাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এখানে খুব কম খরচে মিলবে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টের রোগীদের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে এই ইউনিট। তাছাড়া জরুরি মুহূর্তে মুমূর্ষু রোগীর চাপ সামাল দিতে অবদান রাখবে এ আইসিইউ ইউনিট।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও আইসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অলক নন্দী বক্তব্য প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বেসরকারি পর্যায়ের সবচেয়ে বেশি রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাত্র ১০ বেডের আউটডোর সুবিধা নিয়ে শুরু হওয়া এ হাসপাতালে ইতোমধ্যে ইনডোর বেড সংখ্যা ৮৫০ টিতে উন্নীত হয়েছে।