৭ মাসে ১৭৮ জনের মৃত্যু

15

ঢাকা প্রতিনিধি

রেলপথে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা। এ নিয়ে চলতি বছরের গত ৭ মাসে মোট ১০৫২টি দুর্ঘটনার হিসাব দিয়েছে সেভ দ্য রোড। তাদের তথ্য বলছে, রেলপথে এসব দুর্ঘটনায় ১৭৮ জন নিহত এবং ১১৭০ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার সেভ দ্য রোড-এর এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানাসহ আরও চারজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত। অর্থাৎ ট্রেন চলাচলের সময় যানবাহন আটকানোর জন্য কোনো পাহারাদার কিংবা প্রতিবন্ধক কিছুই নেই। বাকি ১৮ শতাংশ ক্রসিংয়ে পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক, দুটিই আছে। কিন্তু পাহারাদারের অবহেলায় কিংবা চালকের অসতর্কতায় সেগুলোতেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, রেলপথে দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয়, এর ৮৫ শতাংশই মারা যান রেলক্রসিংয়ে। অবশ্য রেললাইনে কাটা পড়ে মৃত্যুর হিসাব রেল কর্তৃপক্ষ রাখে না। মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুতি, এক ট্রেনকে অন্য ট্রেনের ধাক্কা, রেলক্রসিংয়ে গাড়িকে ট্রেনের চাপা, এসবকে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রেলপথে ২৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে ১৪ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হন। ফেব্রæয়ারি মাসে ৪১টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ জন ও আহত ১১১ জন। ১-২৮ মার্চ ২২২টি দুর্ঘটনায় আহত ১৮৬ জন ও নিহত ৩১ জন। এপ্রিল মাসে ১১২টি রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪২ জন ও আহত হন ১৬৬ জন। মে মাসে ২১২টি দুর্ঘটনায় আহত ২২১ জন ও নিহত ২৩ জন। জুনে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৯৭টি, ১৭ জন নিহত ও ১৭২ জন আহত হন।
জুলাই মাসে ঈদযাত্রাসহ রেলপথে ১৪২টি দুর্ঘটনায় আহত হন ২৩২ জন ও নিহত ২৪ জন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং সারাদেশে নিজস্ব শাখার স্বেচ্ছাসেবকদের তথ্যর ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রকাশ করার বিবৃতিতে বলা হয়, রেলের ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টি অবৈধ। অর্থাৎ রেল ক্রসিংয়ের প্রায় ৪৮ শতাংশই অবৈধ। বৈধ ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটম্যান নেই। রেল দুর্ঘটনা বন্ধে অবৈধ ক্রসিংয়ের সমাধান করাসহ ৭টি সুপারিশ দিয়েছে সংগঠনটি।রেলক্রসিং দুর্ঘটনা এড়াতে সুপারিশসমূহ-
সব রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ ও উপযুক্ত গেটবারের ব্যবস্থা করা, রেলক্রসিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করা, জনবল সংকট নিরসন করে রেলপথ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা, সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের দুই হাজার ৯৫৯ কিলোমিটার রেলপথে দুই হাজার ৮৫৬টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে এক হাজার ৪৯৫টি বৈধ ও এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। ৯৬১টি রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই। দেশে ৮২ শতাংশ রেলক্রসিং অনিরাপদ।
বিবৃতিতে শুধুমাত্র রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে রেলট্র্যাকে বহু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে সেগুলো এ হিসাবে যুক্ত করা হয়নি বলে জানানো হয়।