৬৯ পরিবার পেল ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা

18

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএম ডিপোতে অগ্নিকাÐে হতাহত ৬৯ জনের পরিবারের সদস্যদের সাড়ে ৫ কোটি টাকার চেক তুলে দেয়া হয়েছে। বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের সহায়তায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান চেকগুলো সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেন। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে গতকাল সোমবার বেলা ১২টায় এ চেক তুলে দেয়া হয়। এসময় সীতাকুÐে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাÐে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত শ্রমিক ও চালকসহ অন্যদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, অঙ্গ হারানো ব্যক্তির পরিবারকে ছয় লাখ টাকা করে এবং সাধারণ আহতদের চার লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়াদের ২ লাখ টাকা করে দেয়া হয়।
চেক বিতরণের আগে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহমুদ উল্লাহ মারুফের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক শফিকুর রহমান, স্মার্ট গ্রæপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, শ্রমিক লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. কবির ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার (অর্থ) আবদুর রাজ্জাক ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর প্রমুখ।
যাদের মরদেহ এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি, সেই সব পরিবারকে ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করার পর সহায়তার অর্থ দেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, বিএম ডিপোর ঘটনার পর শুধু প্রশাসন নয়, চট্টগ্রামের জনসাধারণ একযোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রামকে ষ পৃষ্ঠা ৭, কলাম ১.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
যে, ‘বীর চট্টলা’ বলা হয়, এর মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করেছে পুরো চট্টগ্রামবাসী।
তিনি আরো বলেন, বিএম ডিপোতে রাত ৯টায় আগুন লাগে। রাত পৌনে ১০টায় ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশনা দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীসহ সবাইকে দুর্যোগ মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণেই এতো বড় দূর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে।
মমিনুর রহমান বলেন, এ দুর্ঘটনায় বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত যত প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, সব প্রতিশ্রæতি রেখেছেন। তারা হতাহতদের পরিবারকে সহযোগিতার যে আশ্বাস দিয়েছেন, সেটা এরই মধ্যে প্রতিপালন করছেন। আশা করবো আগামীতেও যেসব আহত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। যাদের পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তি নেই, সেই পরিবারের ভবিষ্যতে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবেন।
এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর নিহত ১০ জন ও নিখোঁজ ৩ জনের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা করে, গুরুতর আহত ৯ জনকে ১০ লক্ষ টাকা করে, সাধারণ আহত ৫ জনকে ৬ লক্ষ টাকা করে ও প্রাথমিক চিকিৎসাপ্রাপ্ত ৩ জনকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়। বিএম ডিপোর নিহত ৯ জনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে, গুরুতর আহত ৩ জনকে ৬ লক্ষ টাকা করে এবং সাধারণ আহত ১৯ জনকে ৪ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়। এছাড়াও অন্যান্য নিহত ৪ জনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ও আহত ৪ জনকে ৪ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মোট ৬৯টি চেক এর মাধ্যমে মোট ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বিএম ডিপোর মালিকানা প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রæপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপোর দুর্ঘটনায় নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গিয়ে অনাকাঙক্ষিত দুর্ঘটনায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরেও প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটেছে। তারা শহীদ হয়েছেন। এতো বড় একটি দুর্ঘটনার পরও বিএম ডিপো হতাহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবার সহযোগিতায় বিএম ডিপো আবারও তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করবে। হতাহতদের স্মরণে স্মার্ট গ্রæপের প্রধান কার্যালয় এবং বিএম ডিপোতে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ঘোষণা দেন তিনি।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বিএম ডিপোতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সসহ সেবা সংশ্লিষ্ট সবাই যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন সেটি অতুলনীয়। যতদিন আপনারা ব্যবসা করবেন ততদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ রাখবেন। তিনি আরও বলেন, যারা হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবারে যদি চাকরি করতে সক্ষম কেউ থাকে তাকে চাকরি দেন। আর্থিক অনুদান আপনারা পাচ্ছেন, সেগুলো কাজে লাগাবেন। কাউকে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দিবেন না। রিকশা অথবা অন্যকিছু কিনে কাউকে চালাতে দেন। যাতে মূলধন ঠিক থাকে। বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনায় যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে চট্টগ্রামের মানুষ কৃতজ্ঞ।