২৩৫টি দোকানের মধ্যে মাত্র একটিতে আছে মূল্য তালিকা

45

বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের দুই ভবনে দোকান রয়েছে মোট ২৩৫টি। তবে মূল্য তালিকা টাঙানো হয়েছে মাত্র একটি দোকানে! তাও সেটি মাংসের দোকান। অথচ প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানোর আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নগরীর প্রায় সকল বাজারের একই হাল। তবে বহদ্দারহাট সিটি কর্পোরেশন কাঁচা বাজারে ওজন কারচুপির অভিযোগ বেশ পুরনো। তাই ক্রেতাদের কেনা পণ্যের ওজন যাচাইয়ে সহায়তা করতে বসানো হয়েছিল দুইটি ডিজিটাল ওজন স্কেল। এক কোণায় বেশ অসহায়ভাবে পড়ে আছে স্কেল দুইটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রের দেখা মেলে। এসময় বাজারের পাশে চলাচলের সড়কে কাঁচা তরকারির দোকান বসিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো বিষয়টিও পরিলক্ষ্যিত হয়েছে। ক্রেতাদের সেবা নয়; অতিমাত্রায় টাকা আদায়ের অপচেষ্টাই বাজারটিতে দুর্ভোগ বাড়ার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘শুধুমাত্র হাসিল তোলা নয়, ক্রেতাদের সেবা ও বাজার ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখতে হবে ইজারাদারদের’- পূর্বদেশের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মুফিদুল আলম।
পাঁচমাস আগেই সিটি কর্পোরেশন উদ্বোধন করেছে বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের দ্বিতীয় ভবন (ফেইজ-২)। যেখানে ১৯০টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবনটি করতে গিয়ে বাজারের পূর্বপাশে পূর্ব ফরিদা পাড়ার সড়কটি সংকুচিত করেছে সিটি কর্পোরেশন। তার উপর সংকীর্ণ সড়কটির বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে কাঁচা বাজারের দোকান। এসব দোকান থেকে নিয়মিত হাসিল তোলেন বাজারের ইজারাদার। যার কারণে পশ্চিম পাশে লালচাঁদ রোডের উপর চাপ বেড়েছে। ফলে যানজট যেন লেগেই থাকে ওই সড়কে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে বহদ্দারহাট মোড়ে এবং সেখানে যানজটের একটি কারণ লালচাঁদ রোডের গাড়ির অতিরিক্ত চাপ।
অন্যদিকে পাঁচ বছর আগে করা পুরাতন ভবনটিতে (ফেইজ-১) ৪৫টি দোকান রয়েছে। সুড়ঙ্গের মত অপরিকল্পিত সিঁড়ির কারণে বাজারটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা এতদিনেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ওই বাজারে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি দোকানকে দৈনিক ২৫০ টাকা হাসিল, ২০ টাকা বিদ্যুৎ ও জেনারেটর বিল, পানি দিয়ে পরিষ্কার বাবদ ৫ টাকা, দারোয়ান ২০ টাকা, বাথরুমের পানি ২৫ টাকা এবং বরাদ্দ পাওয়া দোকানের মালিককে দোকান ভেদে দৈনিক একশ থেকে পাঁচশ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
এই দুইটি ভবনজুড়ে বিশাল কাঁচাবাজারে মাত্র একটি মাংসের দোকানে মূল্য তালিকা রয়েছে। যেখানে রান কাটা মাংস ৭’শ টাকা এবং হাড়সহ মাংস ৬’শ টাকার কথা উল্লেখ আছে। এই একটি দোকান ছাড়া আর কোনো দোকানে মূল্য তালিকা নেই।
এ বিষয়ে কথা হয় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে। তাদের বক্তব্য মতে, বিক্রেতারা ইচ্ছেমত দাম বলে। তারপর দর কষাকষিতে যা দাঁড়ায় তাতেই বিক্রি হয় প্রয়োজনীয় পণ্যটি। তারা অভিযোগ করেন, পণ্য বিক্রেতারা চক্রবদ্ধ হয়ে দাম বেশি রাখে। সেক্ষেত্রে দর কষাকষি করলেও বেশি দামেই কিনতে হয়। তবে মূল্য তালিকা থাকলে বিক্রেতারা এই কারচুপি করতে পারে না। তাছাড়া ক্রেতারা রমজান বা বিশেষ কোনো সময় নয়, প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চান।
বাজার ভবন দুইটিতে দুইটি ডিজিটাল স্কেল স্থাপন করা আছে। যেখানে ক্রেতারা নিজেরাই ওজন যাচাই করতে পারার কথা থাকলেও বর্তমানে সেই সুযোগ নেই। তবে স্কেল দুইটি দেখে বুঝার উপায় নেই এসব ক্রেতাদের জন্য বসানো হয়েছে। একটির অবস্থান পুরাতন ভবনের পিলারের সামনে। যেখানে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কোনো লেখা বা চিহ্ন নেই। স্কেলের পাশে লাগানো আছে একটি তেল কোম্পানির বিজ্ঞাপন। আরেকটি পড়ে আছে বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির অফিসের সামনে। বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা অবধি অপেক্ষা করে একজনকেও ওজন যাচাই করতে দেখা যায়নি
কাঁচাবাজার সংলগ্ন পূর্ব ফরিদা পাড়ার মুখের সড়কটির দুইপাশে বসে কাঁচা সবজির দোকান। বিক্রেতা আর ক্রেতাদের সমাগম দেখে এটাকে আবাসিকের সড়ক বোঝার কোনো উপায় নেই! মনে হয় খোলা মাঠের কোনো বিশেষ কাঁচা বাজার। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের। তবে লাভবান হচ্ছেন বাজারের ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির উপর প্রায় ৯০টি দোকান বসে। প্রতিটি দোকান থেকে দুইশ টাকা করে হাসিল পান ইজারাদার। আবার এসব দোকানগুলোর দখলের ভিত্তিতে দৈনিক তিন থেকে পাঁচশ টাকা ভাড়া পান স্থানীয় প্রভাবশালীর অনেকেই। তবে নিজের নাম ও তাদের নাম বলতে কোনোভাবে রাজি নন কেউ। তবে এসব দোকান নিয়ে নিছক গরিব মানুষেরা বসে বলে মন্তব্য করেছেন বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম।
এসব বিষয় নিয়ে সিটি কর্পোরেশন বাজারের ইজারাদার তসকির আহমদ বলেন, মূল্য তালিকা নিয়ে আমাদের ভূমিকা থাকা দরকার। তিনি মূল্য তালিকা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন বলে জানান। এ ছাড়া ওজন স্কেলের উপরে লেখা বা সাংকেতিক চিহ্ন বসানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে বাজারের পশ্চিম পাশের সড়কটি মাছের গলি সম্বোধন করে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আইন অনুসারে বাজার এলাকায় কাঁচা পণ্যের দোকান বসলে হাসিল দিতে হয়। সেভাবেই আমরা হাসিল নিই। কোনোভাবে আইনের পরিপন্থী কাজ করবো না। তিনি আরও বলেন, রাস্তার উপর যেসব দোকান বসে এরা মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরাসরি আসে। সকালে আসে দিনভর বিক্রি করে আবার চলে যায়। তাই এসব খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।