১৬ বছর পর বিচার নিষ্পত্তির তোড়জোড়!

125

বাঁশখালীর চাঞ্চল্যকর ১১ হত্যা মামলার বিচার নিষ্পত্তির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উচ্চ আদালতের এক আদেশে আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আব্দুল মজিদের আদালতে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে দুই পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন- বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত পুলিশের এএসপি খোরশেদ আলম ও বর্তমানে এলপিআরে থাকা পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু। দুইজনই এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন। আগামী ১৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা পিপি লোকমান হোসেন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, আদালতে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষী দিয়েছেন। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হ্লা চিং প্রুর সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান আছে। সাক্ষী হ্লা চিং প্রু তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে চার্জশিট দেয়ার সময় আমিন চেয়ারম্যানসহ ৮ জনকে আসামি করেছিলেন। একজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক ক্যাসেট তিনিই জব্দ করেছিলেন। যে কারণে আগামী শুনানিতেও তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে আদেশ দিয়েছেন। ২৩ ডিসেম্বর ছয় মাস শেষ হবে। এরমধ্যে মামলা শেষ করার চেষ্টা করবো। সাক্ষীরা আসছেন, ধারাবাহিকতা থাকলে আশা করছি নির্ধারিত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হবে।
জানা যায়, ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ৩৯ জনকে আসামি এবং ৫৭ জনকে সাক্ষী করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির তৎকালীন এএসপি হ্লা চিং প্রু।পরে নজরুল নামে এক আসামিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়ায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮ জনে। ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম দফা অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরমধ্যে আসামি কালীপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন। সর্বশেষ গত জুলাই মাসে এই আসামির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে মামলাটি গতি পায়। সবমিলিয়ে গত ১৬ বছরে ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরমধ্যে গত আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত আটজন সাক্ষী দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে ১৮ জন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। জেলে আছে তিন জন।
মামলার বাদি ডা. বিমল শীল পূর্বদেশকে বলেন, ‘মূলত আমিন চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞা বাতিল হওয়ার পর মামলাটি গতি পায়। এর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকেও মামলাটি ফেরত আসে। আগস্ট থেকে মামলায় আবারো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। ৩৮ জন আসামির মধ্যে ১৮ জন নিয়মিত হাজিরা দেন। কারাবন্দি থাকা তিনজন ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে ও পলাতক আছেন। ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সাক্ষীরা আসলে আশা করি নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি হবে।’
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুরের শীলপাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ১১জনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিমল শীল বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন। সেদিনের ঘটনায় নিহতরা হলেন- তেজেন্দ্র লাল শীল, বকুল বালা শীল, অনিল কান্তি শীল, স্মৃতি রানী শীল, সোনিয়া শীল, রুমি শীল, বাবুটি শীল, প্রসাদী শীল, এ্যানী শীল, চার দিনের শিশু সন্তান কার্তিক ও বান্দরবান থেকে বেড়াতে যাওয়া তেজেন্দ্র লাল শীলের ভায়রা দেবেন্দ্র শীল।
সেদিনের ঘটনায় স্বজন হারানো নির্মল শীল পূর্বদেশকে বলেন, এ মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। ২০০৩ সালের ঘটনা ২০১৯ সালেও নিষ্পত্তি হয়নি। ঘটনার পর থেকে বিচারের দাবিতে সোচ্চার আছি। সবাইকে হারিয়েছি। কিছু পাওয়ার আশা নাই, শুধু দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। মা-বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।