একটাই চাওয়া ভোট সুষ্ঠু, সুন্দর হতে হবে

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে যা যা করণীয় করতে হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মতো এ নির্বাচন হবে। নির্বাচনে অনিয়ম হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা কোনোরকম কুণ্ঠাবোধ করবো না। ভোটের দিন যে যেখানে থাকবেন সর্বময় ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন। এতে বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আমরা আপনাদের পাশে আছি। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে কেউ চান না ভোট খারাপ হোক। আপনাদের প্রতি নির্দেশনা ভোট সুন্দর করার জন্য যা যা দরকার তা করবেন। সব সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।
গতকাল বুধবার সকালে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে প্রাইমারি টিচার্স ইনস্টিটিউটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে বিদ্যমান এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব থাকতে পারে। ভিন্নতাও আসতে পারে। শাসক দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক নিজেও বলেছেন,এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনের বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নির্বাচন করার অধিকার আছে প্রত্যেকের। এমপি সাহেবদের ব্যাপারেও আমরা নিজেরাই সতর্ক আছি। এমপিরা যাতে হস্তক্ষেপ না করেন, প্রভাব না খাটান সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারকে জানানো হয়েছে। এমপি সাহেবরা এলাকায় আসতে পারেন, ভোটার হলে আইনের নিয়ম মেনে ভোট দিতে পারবেন। আগামীতে এমপিরা যাতে ভোটার এলাকায় না যান সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। আরপিও সংশোধনের আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এমপিদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, যেখানেই কোনো রকমের কারচুপি, অন্যায় কার্যক্রম হবে সেখানেই নির্দেশনা দেয়া হবে। ভোটকে সুন্দর করতে হবে এটাই চাওয়া। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পুরোটাই প্রিজাইডিং অফিসারের। উনি প্রয়োজনে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে যতবার দরকার ততবার ভোটগ্রহণ করবো।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালীতে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রার্থিতা বাতিল হয়নি। চট্টগ্রামে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলের যথেষ্ট উপাদান ছিল। তাকে ভোটের আমরা সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ট্র্যাক করছিলাম। তাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না, থানায় ঢুকে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন। সেখানে সার্কেল এসপি তাকে নিবৃত্ত করতে পারছেন না। এরপরে তো আর বসে থাকা যায় না। তাহলে আমাদের অস্তিত্ব থাকে না। তারপর উনি আইন আদালতে কি করেছেন সেটি পরের বিষয়। কিন্তু কাজতো হয়েছে। পুলিশ সুপারের রিপোর্টের ভিত্তিতেই উনার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। আমরা কিন্তু এক্ষেত্রেও উপজেলা নির্বাচন চলাকালে কোনোরকম কুণ্ঠাবোধ করবো না। আমরাই গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি-অনিয়ম হওয়ায় ভোটগ্রহণ বন্ধ করেছিলাম। আইন ১৯৭২ সাল থেকে ছিল কেউ সেটা বাস্তবায়ন করেনি।
ইসি আনিসুর বলেন, আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিচে নামার কোনো সুযোগ নেই। ওই সময় দেশের মানুষ, আন্তর্জাতিক মহল যেমন দেখেছে এখনও দেখবে। দলীয় সরকার তখনও ছিল, এখনও নতুন সরকার আছে। এ সরকারের আওতায় কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে সেটাও দেখা হবে। এ নির্বাচনেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রার্থিতা রাখা হয়নি। যে কারণে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রতীক দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি ভোটারের উপস্থিতি হার বাড়বে। মাত্র ৯টি জেলায় ইভিএমে নির্বাচন হবে। যে জেলায় ইভিএম নির্বাচন করবো সেখানে পুরো জেলা ইভিএমে হবে। একটা জেলায় দুই ধরনের প্রক্রিয়া নির্বাচন হবে না। অপেক্ষাকৃত ছোট জেলায় ইভিএমে ভোট হবে। সচল ইভিএম যা আছে সেগুলো দিয়ে ৮০-৮৫টি উপজেলায় নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, চারটি পর্বে উপজেলা নির্বাচন ভাগ করা হয়েছে। চারটি পর্যায়েই সকল জেলাকে সম্পৃক্ত করেছি। কোনো কোনো জেলা চতুর্থ উপজেলায় নেই। ম্যানেজমেন্টের সুবিধার জন্য এটা করা হয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও কৃচ্ছতা সাধনের জন্য বলা হয়েছে। এক জেলায় যখন পুরো নির্বাচন একেবারে শেষ করতে চাই তখন ওই জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সম্ভব নয়। পাশ্ববর্তী জেলা থেকে বাহিনী আনতে গেলে ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
নির্বাচনী অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার বলেন, পেপার ব্যালট ভোটের দিন সকাল ৮টার পূর্বে পৌঁছানো হবে। দ্বীপাঞ্চল, চরাঞ্চলে, পাহাড়ী অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগেরদিন পাঠানো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত রাখা হয়েছে। বিশেষ জায়গায় বেশি রাখা হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে কয়েকটি এরিয়া খুব খারাপ সমস্যা ছিল। আমরা সেগুলোর দিকে এবারও নজর রাখবো।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল আহমেদ এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিএমপি কমিশন কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, বিজিবি’র রিজিওনাল কমান্ডার মো. আজিজুর রহমান, ডিজিএফআই চট্টগ্রাম শাখার অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, আনসার ও ভিডিপি উপপরিচালক মো. সাইফুল্লাহ রাসেল, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলীসহ তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইনমৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।