১৬৩ ইউপির ভোট স্থগিত

6

 

ভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ বিবেচনায় খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তিনটি করে জেলার ১৬৩ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট স্থগিত করা হয়েছে, আপাতত ভোট হবে না ৯ পৌরসভাতেও; একই সঙ্গে পেছানো হয়েছে তিন সংসদ উপ নির্বাচন। আগের তফসিল অনুযায়ী বাকি ২০৪ ইউপির এবং লক্ষীপুর-২ আসনের উপ-নির্বাচন ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন সভা শেষে বিকালে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি জানান, করোনা ভাইরাস মহামারিতে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আইইডিসিআর এর সুপারিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ৯ পৌরসভার ভোটও স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন বলে তিনি জানান। ভোট স্থগিত করা হলেও এসব নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি সচিব। মহামারিতে সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে এ নিয়ে দুই দফা ভোট পেছানো হলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বসে কমিশন সভা।
আগামি ২১ জুন খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬৩ ইউপিসহ ৩৭১টি, ১১ পৌরসভা ও লক্ষীপুর-২ আসনের উপ নির্বাচনের কথা ছিল। এরমধ্যে প্রার্থী মারা যাওয়ায় চার ইউপির ভোটের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ১৬৩ ইউপির পাশাপাশি ৯ পৌরসভার ভোট স্থগিত করা হয় ।
ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন ১৩ দিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই তিন উপ নির্বাচন ১৪ জুলাই হওয়ার কথা ছিল।
সংসদ নির্বাচন : লক্ষীপুর-২ আসনের নির্বাচন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন ১০ দিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এই দিনের নির্বাচন পেছানোর জন্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও দাবি ছিল।
১৪ জুলাই দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে ভোট না রাখার দাবি জানিয়েছিল জাতীয় পার্টি।
ইউনিয়ন পরিষদ : আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩৬৭ ইউপির মধ্যে খুলনা বিভাগের সব ইউপি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ইউপিসহ ১৬৩ ইউডপির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের ৬৮টি, খুলনার ৩৪টি, সাতক্ষীরার ২১টি, নোয়াখালীর ১৩টি, চট্টগ্রামের ১২টি ও কক্সবাজার জেলার ১৫টি ইউপি রয়েছে।
পৌরসভা : ১১টি পৌরসভার মধ্যে দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ ও ঝালকাঠির সদর পৌরসভার নির্বাচন যথাসময়ে ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊচ্চ ঝুঁকির কারণে স্থগিত করা হয়েছে বাকি ৯ পৌরসভার নির্বাচন।
আইইডিসিআর অধিকতর উচ্চঝুঁকি জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাজশাহী, কক্সবাজার, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, সাতক্ষীরা, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মৌলভীবাজার, বাগেরহাট, ফেনী, গোপালগঞ্জ ও মেহেরপুরকে চিহ্নিত করেছে। খবর বিডিনিউজের
বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বরিশাল বিভাগে সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে থাকায় ভোট নির্ধারিত সময়ে হবে। তাই আইইডিসিআর এর উল্লেখিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর বাইরে বরিশালসহ সবখানে নির্ধারিত সময়ে ভোট হবে’।
এ বৈঠকে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোট নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এখনও অনেক সময় রয়েছে। অনেক এলাকায় ঝুঁকিও রয়েছে। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি’।
যেসব স্থানীয় সরকারের ভোট আটকে আছে, সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যানসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা বহাল থাকবেন কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়। স্থানীয় সরকার ইউপি আইন অনুযায়ী ৯০ দিন দায়িত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে কাকে দায়িত্ব দেবেন’।
প্রথমে এই বছর ১১ এপ্রিলে ভোট হওয়ার কথা ছিল এসব ইউপি ও পৌরসভায়। মহামারিতে সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে দুই দফা ভোট পেছানো হল। এবার ২১ জুন ২০৪ ইউপি, দুই পৌরসভা ও একটি সংসদীয় আসনের ভোট রেখে অন্যগুলো স্থগিত করা হয়। ১৪ জুলাইয়ের উপ নির্বাচন নতুন তারিখ অনুযায়ী ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রিফিংয়ের সময় অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, এনআইডি উইং এর মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর, ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান ও এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।