১৪ এপ্রিল থেকে ম্যানুয়াল ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান বন্ধ

12

ঢাকা প্রতিনিধি

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের ভূমি কর এখন অনলাইন করা হয়েছে। তবে বর্তমানে এটা ম্যানুয়ালিও আছে। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতি পুরোপুরি বন্ধ করে দেব। শতভাগ অনলাইন করা হবে ভূমিকর। এটা খুবই স্পষ্ট। ম্যানুয়ালের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ভূমিমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট গতকালের কার্য অধিবেশনে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বারিক -সহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে প্রস্তুত করা ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ভূমির অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মত অকৃষি জমিতে সিলিং রাখার বিধান করেছে। প্রাথমিকভাবে ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এ ৪০ বিঘা সিলিং (সর্বোচ্চ সীমা) এর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে এমন বিধানও রাখা হবে যেন বৃহৎ শিল্প স্থাপনে অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমা কোনো বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনে সরকার অকৃষি জমির ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত শিল্প স্থাপনে অনুমোদন দিতে পারবে। অন্যদিকে কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এর খসড়াও আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ান সহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র। কৃষি জমির সিলিং ৬০ বিঘা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরীক্ষণের পর এই দুই আইনের খসড়া আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মন্ত্রী বলেন, ভূমি ভবনে একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকগণকে ভূমিসেবা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং এজন্য প্রাইভেট এজেন্টশীপ নীতিমালা করা হচ্ছে। কলসেন্টার ছাড়াও এসব সেবা কেন্দ্রে নাগরিকরা সরাসরি গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া, প্রাইভেট এজেন্ট কার্যক্রম মনিটরের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক নাগরিক কমিটি করা হবে।
সাইউজ্জামান চৌধুরী বলেন, দুটি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ডিজিটাল জরিপ হচ্ছে। একটি প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীতে জরিপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মৌজার ডিজিটাল জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ৩টি সিটি কর্পোরেশন (চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন), মানিকগঞ্জ পৌরসভা, ধামরাই উপজেলা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ডিজিটাল সার্ভে হবে। এসব এলাকা ছাড়া সারাদেশে পটুয়াখালীতে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল সার্ভে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৫ কোটি ২১ লক্ষের অধিক জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে রয়েছে। এ সিস্টেম থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লক্ষের অধিক খতিয়ান ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকগণ হাতে পেয়েছেন। বিদেশেও এই সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে এ সিস্টেমে। কোন খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হবার সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ান এর ট্রি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।
এ অধিবেশনে জেলা প্রশাসকগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন ও প্রশ্ন করেন। খাসজমি, নামজারি, হাট ও বাজার, ভূমি অফিস নির্মাণ, জলমহাল, পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা, কোর্ট অফ ওয়ার্ডস, ভূমি সংশ্লিষ্ট জনবল ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন-সহ ভূমি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় উঠে আসে কার্য অধিবেশনের আলোচনায়।
উল্লেখ্য, ভূমি রেজিস্ট্রেশন ও ভূমি জরিপ ব্যতীত, ভূমি রাজস্ব ও ভূমি ব্যবস্থাপনা সহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সকল সেবা প্রদানে কালেক্টর হিসেবে জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক।