১০ মাসে পাউবোর পাঁচ নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি!

9

রাহুল দাশ নয়ন

২০২২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এই দশ মাসে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক বিভাগের (বিভাগ-১) পাঁচজন নির্বাহী প্রকৌশলী সরানো হয়েছে। শেষ চারজন প্রকৌশলী দুই থেকে চার মাসের বেশি থাকতে পারেননি। পাঁচ প্রকৌশলী পটিয়ার মেগা প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। একজন ছাড়া বাকি চার প্রকৌশলীকে পটিয়ায় চলমান এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার ভাগাভাগির জের ধরেই প্রভাবশালী মহলের চাপে সরানো হয়েছে বলে জানা যায়। সর্বশেষ বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবসরজনিত কারণে সরতে হয়েছে। তবে প্রকৌশলী বদলির বিষয়টি চাকরির অংশ বলেই মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘স্থায়ীভাবে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে এখন সমস্যা কেটে যাবে। সবাই চাকরির অংশ হিসেবেই বদলি হয়েছেন। এরমধ্যে একজন নিজ থেকেই নিজের এলাকায় চলে গেছেন। কিছু সমস্যা হলেও তা আমরা সমাধান করে ফেলি।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরাকে গত বছরের ৪ এপ্রিল রাঙামাটি বিভাগে বদলি করা হয়। একইদিনে যোগদান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী। তিনিও দুই মাসের মাথায় ২৮ জুন আইসিজেড ও ক্লাইমেট চেঞ্জ ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে বদলি হন। একইদিনে চট্টগ্রাম পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খানকে এই দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ৮ আগস্ট নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান যোগদান করেন। তিনিও চার মাসের মাথায় গত ডিসেম্বরে বদলি হয়ে সিরাজগঞ্জ চলে যান। নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন নুরুল আবছার আজাদ। তিনি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অবসরজনিত কারণে সরতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেছেন শওকত ইবনে শাহীদ।
পওর বিভাগ-১ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি নিয়ে চারজন ঠিকাদারের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, প্রায় দুই বছর আগে পটিয়ার প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। এই সময়ে প্রকল্পের বড় অংশের টেন্ডার শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের টেন্ডারে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নজর পড়েছে। পছন্দের ঠিকাদার দেয়া না দেয়া নিয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের চাপের মুখে আছেন প্রকৌশলীরা। যার খেসারত দিতে হয়েছে বদলি হওয়া প্রকৌশলীদের। যে ক’জন নির্বাহী প্রকৌশলী এই চেয়ারে (পাউবো বিভাগ-১) বসেছেন তারা কোনো না কোনোভাবে চাপের মুখে ছিলেন। যে চাপাচাপির কারণে যথাসময়ে টেন্ডারও শেষ হয়নি। এখন নতুন যিনি এসেছেন তিনিও পটিয়ার প্রকল্পের এসডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সেখানের পরিবেশ সম্পর্কে ভালো জানেন। এখন তিনি এই দায়িত্বে কতদিন থাকবেন তা দেখার বিষয়।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের বাইরে বদলি হওয়া এক প্রকৌশলী বলেন, ‘পটিয়ার প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। এরকম ঝামেলা সব জায়গায় একটু-আধটু আছে। এগুলো আমাদের কাছে কোনো বিষয় না। টেন্ডার করতে গেলেই প্রেসার একটু থাকে। এতটুকু প্রেসার নিতে না পারলে চাকরি করা কঠিন।’
পাউবো সূত্র জানায়, পটিয়ার এক হাজার ১৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ২০২১ সালের ৪ মে। বিভক্ত করা ৪৫টি প্যাকেজের মধ্যে ২২টির টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। এরমধ্যে ১২টি প্যাকেজের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো টেন্ডার আহŸান কিংবা কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। গত ৩০ নভেম্বর প্রকল্পটির বেড়িবাঁধ ও রেগুলেটর কাজের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একটি সেতু নির্মাণ, সেচ অবকাঠামোয় ২৪টি, খাল পুনঃখনন ৩০ দশমিক ২০ কিলোমিটার, বাঁধ নির্মাণ ২৫ দশমিক ৫১ কিলোমিটার, নদীর তীর সংরক্ষণ ২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার ও ভূমি অধিগ্রহণ হবে ৫৮ দশমিক ৯২৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের নতুন বাঁধ নির্মাণ কাজ, খাল পুনঃখনন কাজ, নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের কয়েকটি প্যাকেজের টেন্ডার শেষ হয়েছে। ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজের চারটি, রেগুলেটর নির্মাণ কাজের ২৬টি, ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজের টেন্ডার এখনো শেষ হয়নি।