হালদাপাড়ে উৎসবের অপেক্ষা নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ

32

হাটহাজারী প্রতিনিধি

হালদায় কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছেড়েছে। তাই রেণু ফোটানোর জন্য হ্যাচারি কূয়ো সংস্কার ও মাটির কূয়ো তৈরি করে ডিম আহরণের জন্য নৌকা, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে হালদার পাড়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন শত শত ডিম সংগ্রহকারী। জানা গেছে, গতকাল রাত ১১টার দিকে হালদায় নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। সাধারণত বজ্রবৃষ্টির সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে। এখন পরিবেশ অনুক‚লে থাকায় এবং পূর্ণিমা তিথির কারণে ডিম ছাড়ার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নদীতে মা-মাছের আনগোনা তথা ডিম ছাড়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে এই প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকারীরা অবৈধভাবে মা-মাছ শিকারে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে জাল দিয়ে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ প্রতিদিনের অভিযানে হাজার হাজার চিংড়ি রেণু পোনা উদ্ধার,নৌকা, রেণু ধরার ঠেলাজালসহ নানা সরঞ্জাম জব্দ করার পরও অসাধু মাছ শিকারীদের এ ধরনের কাজ থেকে ফেরানো হচ্ছে না। পাশাপাশি এ ঘটনায় নৌ-পুলিশ কাউকে আটক করতে পারছে না। এছাড়া এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ সচেষ্ট থাকলেও মৎস্য অধিদফতরের কার্যকর কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ ডিম সংগ্রহকারীদের।হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকার অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, রেণু ফোটানোর জন্য হ্যাচারি কূয়ো সংস্কার ও মাটির কূয়ো তৈরি করে ডিম আহরণের জন্য নৌকা, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে শত শত ডিম সংগ্রহকারী হালদার পাড়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। যে কোন সময় মা-মাছ ডিম ছাড়বে এ অপক্ষোয় আছি। আমরা ডিম সংগ্রহকারীরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে ডিম সংগ্রহকারীদের জালে পাওয়া মা-মাছের একটা দুইটা ডিম পাওয়াকে পুজি করতে নমুনা ডিম ছেড়েছে বলে প্রচার করেছিল কৃত্রিম পোনা উৎপাদনকারী অসাধু একটি চক্র। অথচ এসব ডিমগুলোকে নমুনা ডিম বলা যায় না।
হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা অভিযোগ করে বলেন, কার্প জাতীয় মা-মাছের প্রজনন মৌসুমে অবৈধভাবে জাল দিয়ে মাছ শিকারের অপচেষ্টা ও চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করতে মৎস্যদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ সচেষ্ট থাকলেও মৎস্য অধিদফতরের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না; তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। অথচ হালদা ও নদীর মা-মাছ এবং জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় উপজেলা প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ দিবারাত্রি অভিযান পরিচালনাসহ নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
গতকাল শনিবার ভোররাতে হালদা নদীর ছায়ারচর ও মদুনাঘাট এলাকায় হালদা অস্থায়ী নৌ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. এনামুল হক সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনাকালে তিনটি চরঘেরা জাল, দুইটি নৌকা ও তিন হাজার চিংড়ি রেণু পোনা উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ১২ মে নৌ-পুলিশ প্রায় ৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা মূল্যের ১৮ হাজার মিটার মা-মাছ ধরার নিষিদ্ধ সুতার ভাসান জাল, ডিঙ্গি নৌকা ও ঠেলা জাল জব্দ করেছে। তাছাড়া, গত ৮ মে হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ হাজার চিংড়ি রেণু, একটি নৌকা, রেণু ধরার ঠেলা জালসহ আরও নানা সরঞ্জাম জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ।
অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌ-পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া পিপিএম বলেন, হালদা নদীতে মা-মাছের আনগোনা তথা ডিম ছাড়ার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে এই প্রজনন মৌসুমে মাছ শিকারীরা অবৈধভাবে মা-মাছ শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অবৈধভাবে জাল দিয়ে চিংড়ি রেণু সংগ্রহ করে যাচ্ছে। নদীর মা মাছ রক্ষায় ও প্রজননের সুরক্ষায় নৌ পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি অভিযানের পরে চিংড়ি রেণু তৎক্ষণাৎ নদীতে অবমুক্ত এবং জব্দকৃত নৌকা ফুটো করে নদীতে ডুবিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ঠেলা জাল ও নানা সরঞ্জাম আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে।