স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ১৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

52

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এবছর চট্টগ্রামের দুই জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্ব প্রয়াত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ (মরণোত্তর) ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ ১২ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার। আগামী ২৫ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানকে ২০১৯ সালের ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ তুলে দেবেন।
বাসস জানিয়েছে, গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনীতি) মোসাম্মাৎ নাসিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এবছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
এবছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীতরা হলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে- শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এটিএম জাফর আলম (মরণোত্তর), আ ক ম মোজাম্মেল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ডা. কাজী মেজবাহুন নাহার, মরহুম আব্দুল খালেক (মরণোত্তর), মরহুম অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ (মরণোত্তর), চিকিৎসাবিদ্যায় -ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাক্তার নূরুন্নাহার ফাতেমা বেগম, সমাজসেবা/জনসেবায় – ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, সংস্কৃতিতে – মুর্তজা বশীর, সাহিত্যে – হাসান আজিজুল হক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে – অধ্যাপক ড. হাসিনা খাঁন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
চট্টগ্রামের দুই জ্যোতির্ময় মনীষীর নাম প্রয়াত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। নিজেদের কর্মগুণে তারা নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন, পরিণত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে অধ্যাপক খালেদ ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এদেশের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার জগতে তার অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তিনি দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। চট্টগ্রামের প্রাচীন ও পাঠকনন্দিত দৈনিক আজাদীর সাথে যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। আমৃত্যু তিনি আজাদীর সম্পাদক ছিলেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জন্ম ১৯২২ সালের ৬ জুলাই পাটনায় হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস রাউজান থানার সুলতানপুর গ্রামে। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবন দুই-ই শুরু হয়েছিল ছাত্রাবস্থায়। ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তাঁর পরিচয় হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের স্বাধিকার ও প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। শুভ্র ও নীতিনিষ্ঠ জীবনাদর্শ, নির্লোভ ও দৃঢ়চিত্ত আর ঋজু ব্যক্তিত্বের গুণে নিজেই তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি প্রয়াত হন।
অপরদিকে, মীরসরাইয়ের ধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা ষাটের দশকের নামকরা ব্যবসায়ী ও তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এস রহমানের সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৪৩ সালের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী এই আলোকিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী মহান মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর – ১ এর সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। পাক-হানাদারদের বাঙালি নিধন এর নীলছক অনুযায়ী, একাত্তরের ২৫ মার্চের কালোরাত্রির তান্ডবটি শুধুমাত্র ঢাকা ও অন্য জেলাগুলোতেই নয়, দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও চালানোর পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত ছিল। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামে বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য ছিল যথাক্রমে প্রায় পাঁচ হাজার ও ছয়শ’। অন্যদের বাঙালি সৈন্যদের মধ্যে ছিল ইস্ট বেঙ্গল সেন্টারে নব-গঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল এর নতুন প্রায় দুই হাজার পাঁচশ’ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ এর উইং ও সেক্টর হেড কোয়ার্টার এর রাইফেলসরা এবং পুলিশ বাহিনী।
কালোরাত্রির নৃশংসতা ঠেকাতে সেদিন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাহসী বীর বাঙালি যোদ্ধারা শুভপুর ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা থেকে আগুয়ান পাকিস্তানি সেনাদলের পথ রুদ্ধ করে দেন এবং চট্টগ্রাম শহর ও ক্যান্টনমেন্টের প্রধান প্রধান এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। পরবর্তীতে তিনি সিইনসি স্পেশাল ট্রেনিং নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ বিভিন্নস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করেন।