সুস্থ কিডনির জন্য সচেতনতার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

20

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। যদিও কিডনি রোগীর প্রকৃত সংখ্যা কত তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে প্রতিটি পেশার মানুষের মধ্যে কিডনির জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এমনকি চিকিৎসকরাও রোগটি থেকে মুক্ত নন, অনেক চিকিৎসকও মারা যাচ্ছে কিডনি জটিলতায়।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হবে। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এই দিবসটি পালিত হয়। এবারে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সবার জন্য সুস্থ কিডনি’।
কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগের কারণ জেনে সচেতন থাকতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে জানতে হবে কীভাবে রোগ আটকানো যায়। কিডনি রোগ উপসর্গবিহীন। কিডনির কার্যক্ষমতা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেলে উপসর্গ প্রকাশ পায়। কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ প্রদাহ, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়টিক ও ব্যথানাষক সেবনেও কিডনি বিকল হতে পারে- বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২০ সালে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮ হাজার ১৭ জন মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে মারা গেছেন ১০ হাজার ৬২২ জন। একই সাথে ২০২০ সালে দেশে বিভিন্ন রোগে ভুগে মোট ৮ লাখ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে কিডনি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ১৭ জন। ২০১৯ সালে কিডনি জটিলতায় যত মানুষ মারা গেছে পরের বছরে একই কারণে মারা গেছে তিনগুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৪ জন রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৪০৭ জন রোগী এসেছে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে। এই রোগীদের ৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে, ২০২২ সালে দেশের ওই হাসপাতালগুলোতে ৩৩ হাজার ৩০৬ জন কিডনি রোগী ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে মারা গেছে এক হাজার ২৭ জন।
এদিকে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের উদ্যোগে এবার চিকিৎসকদের নিয়ে ব্যতিক্রম কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সকল চিকিৎসকদের কিডনির বর্তমান পরিস্থিতি জানা যাবে এই কর্মসূচির আওতায়। কর্মসূচির আওতায় আগামী ১২ মার্চ চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের উদ্যোগে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে হাসপাতালের সকল চিকিৎসকদের কিডনি স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া কিডনি দিবসকে কেন্দ্র করে আজ চমেক হাসপাতালে সকাল ৯টায় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। কিডনি দিবস উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সহ চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা জানান, বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী ১২ মার্চ একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এবারে হাসপাতালের সকল চিকিৎসকদের উপর কিডনি স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। একইভাবে করোনার আগে শিক্ষার্থীদের উপর কিডনি স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল।
কিডনি রোগের মধ্যে সিকেডি বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হল অন্যতম। ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা মূলত দুটি – প্রতিস্থাপন ও ডায়ালাইসিস। কিন্তু দেশের কিডনি রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল। প্রতি ১৫ লাখ মানুষের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র একজন। আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ডায়ালাইসিস সুবিধা পেয়ে থাকেন। চিকিৎসক ও দাতার অভাব এবং আইনি জটিলতায় প্রতিস্থাপনের সুযোগও সীমিত। সব মিলিয়ে ভাল নেই দেশের কিডনি রোগীরা।
প্রসঙ্গত, করোনার আগে বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের উদ্যোগে স্কুল শিক্ষার্থীদের কিডনি স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল।
চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এখন হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে চারটি ডায়ালাইসিস মেশিন চালু আছে। আরও তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিন হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রয়েছে। এখন করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এই তিনটি মেশিন গরীর ও মুমূর্ষু রোগীদের সেবায় ব্যবহার হচ্ছে। বলতে গেলে বর্তমানে হাসপাতালে ৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন এসেছে। এসব মেশিন চালুর পর মোট ১৭টি মেশিনের মাধ্যমে কম নির্বিঘ্নে গরীব রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
তাছাড়া এখানে সরকারিভাবে কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারবে কিডনি রোগীরা। একজন রোগীকে ছয় মাসের জন্য একেবারে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে দুই সেশনে ৪১৬ টাকায় এ ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে।