সুধীন দাশগুপ্ত

1

সুধীন দাশগুপ্ত, একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক। তিনি হিন্দি, অসমীয়া এবং ওড়িয়া প্রভৃতি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় কাজ করেছিলেন। তার রচনা ও পরিচালনায় বাংলা আধুনিক গানে স্পন্দনের সৃষ্টি করে। পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের গানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।
১৯২৯ সালের ৯ই অক্টোবর সুধীন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে, সুধীন দাশগুপ্ত নামেই সমধিক পরিচিতি পান। তিনি দার্জিলিংয়ে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল বাংলাদেশের যশোর জেলা ‘কালিয়া’ গ্রামে। তার বাবা মহেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত দার্জিলিং সরকারী বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন এবং তার মা একজন সমাজকর্মী ছিলেন। সুধীন দাশগুপ্ত প্রথম থেকেই সংগীতে দক্ষ ছিলেন। তিনি সমান দক্ষতার সাথে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন, যেমন সেতার, সরোদ, হারমোনিয়াম, পিয়ানো, ম্যান্ডোলিন, পিকলু, গিটার, বেহালা, এসরাজ ইত্যাদি। এ ছাড়া তবলা ও ড্রামে পারদর্শী ছিলেন। তিনি রয়্যাল স্কুল অব মিউজিক লন্ডন থেকে সংগীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।
তিনি লÐন রয়েল স্কুল অব মিউজিক থেকে সংগীতে স্নাতক করেন। তিনি অনেক খেলাধুলা ভালবাসতেন। কলকাতাতে থাকার সময় তিনি ভবানীপুর ক্লাব হকি দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৯-৫০তে তার পরিবার কলকাতায় স্থায়ীভাবে চলে আসে। এই সময় তিনি ক্রমাগত বাঙালা আধুনিক সংগীতের সাথে জড়িয়ে পরেন। কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক কমল দাশগুপ্তের সহকারি হিসেবে দায়িত্ব নেন।এছাড়াও তিনি আইপিটিএর কলকাতা উত্তর স্কোয়াড (ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটারস অ্যাসোসিয়েশন) এর জন্য গান সৃষ্টি করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। হিস মাস্টার ভয়েস (এইচ এম ভি) এর ক্ষীতিশ বসু তাকে আধুনিক বাঙালা গান তৈরির সুযোগ দেন। ১৯৫৩ সালে প্রথমবার তিনি বেচু দত্তের কতো আশা, কতো ভালোবাসা ও কেনো আকাশ হতে শীর্ষক দুটি আধুনিক বাঙালা গানে সুর দেন। তার বৈচিত্র্যময় সাঙ্গীতিক যাৎৰা মৃত্যু আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
তিনি মঞ্জুশ্রী সেনগুপ্তকে বিয়ে করেছিলেন। তার পুত্র সৌম্য একজন আর্কিটেক্ট ও কন্যা সবেরি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার।
১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকগুলি বাংলা আধুনিক গানের পাশাপাশি বাংলা মৌলিক গানের স্বর্ণযুগ বলে বিবেচিত হয়। এই সময় গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, শ্যামল গুপ্ত, প্রণব রায়, রবিন চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র চিত্রোপাধ্যায়, অনোল চট্টোপাধ্যায়, অনুপম ঘটক, অনিল বাগচী, জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ, সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ, হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা এবং সুধীন দাশগুপ্ত প্রমূখ বিখ্যাত সংগীত পরিচালক এবং গীতিকারদের অবদানের মাধ্যমে বাংলা সংগীত সমৃদ্ধ হয়েছিল। তিনি তবলা, সেতার, পিয়ানো, হারমোনিয়াম, এসরাজ, বেহালা এবং অন্যান্য বিভিন্ন ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রগুলি দক্ষতার সাথে বাজাতে পাড়তেন।
সুধীন দাশগুপ্তকে পঞ্চাশের দশকের শেষেরদিকে গীতা দত্ত এবং গুরু দত্ত তাদের বোম্বের (মুম্বাই) প্রোডাকশন হাউসে যোগদান করবার জন্য আমন্ত্রণ করেছিলেন। সুবীর সেন এবং সুধীন দাশগুপ্ত মুম্বাইয়ের তারদেও সোনাওয়ালা ভবনে একসাথে থাকেন। এ সময় সুধীনবাবু একটি গান রচনা করেছিলেন “এতো সুর আর এতো গান”, যা সুবীর সেন অনেক পরে রেকর্ড করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে সুবীর সেনের দ্বিতীয় রেকর্ডটিতে সুধীন দাশগুপ্তের দুটি রচনা “ঐ উজ্জ্বল দিন ডাকে স্বপ্ন রঙ্গীন” এবং “স্বর্ণঝরা সূর্যরঙে” মুক্তি পেয়েছিল। এই অমর সৃষ্টিগুলির সুরকার এবং গীতিকারক সুধীন দাশগুপ্তকে বিখ্যাত করে তুলেছিল এবং বাংলা গানের জগতে তার জন্য একটি স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছিল। সুধীন দাশগুপ্ত অনেক গানের কথা লিখেছেন। তার গানের অগাধ জনপ্রিয়তা নিজেই তার গানের কাব্যিক মূল্যবোধগুলির সাথে তাদের সাহিত্যের মূল্যবোধের কথা বলে। তাঁর সৃষ্টির প্রথমটি ছিল ১৯৫৪ সালে সুবীর সেনের জন্য। তিনি যে গানটি লিখেছিলেন, তা ছিল ইতো সুর আর এটো গান। যা বাংলা সংগীত জগতের এক মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছিল :
এত সুর আর এত গান যদি কোনদিন থেমে যায়
সেইদিন তুমিও তো ওগো জানি ভুলে যাবে যে আমায়।
কতদিন আর এ জীবন কত আর এ মধু লগন
তবুও তো পেয়েছি তোমায় জানি ভুলে যাবে যে আমায়।
আমি তো গেয়েছি সেই গান যে গানে দিয়েছিলে প্রাণ।
ক্ষতি নেই আজ কিছু আর ভুলেছি যত কিছু তার
এ জীবনে সবই যে হারায়, জানি ভুলে যাবে যে আমায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি সংরক্ষণাগার তৈরি করে এই মহান সংগীতজ্ঞকে শ্রদ্ধা জানায়। যেখানে বাংলার তিন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বের জীবন ও রচনা চিত্রিত করা হবে। তারা হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী এবং সুধীন দাশগুপ্ত।
তিনি ১৯৭২ সালে বাঙালা ছবি পিকনিকের জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিষ্ট এসোসিয়েসন পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
১০ জানুয়ারি ১৯৮২ (বয়স ৫২) গুণী এই ব্যক্তির মৃত্যু বরণ করেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া