বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন আল জাফর চৌধুরী

3

দেশকে শত্রুমুক্ত ও স্বাধীন করতে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন এবং সশস্ত্র যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হারুন আল জাফর চৌধুরী অন্যতম। হারুন আল জাফর চৌধুরী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারক। হারুন আল জাফর চৌধুরী দক্ষিণ চট্টগ্রামের অবিভক্ত পটিয়া থানার (বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলার) উত্তর হাশিমপুর সৈয়দাবাদ গ্রামে ১৯৩৪ সালের ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল জলিল চৌধুরী ও মাতার নাম মজলিস খাতুন। তাঁরা তিন ভাই ও এক বোন। তিনি দাম্পত্য জীবনে দুই গুণী গৃহিণীর সাথে সংসার বাঁধেন। স্ত্রীর নাম আনোয়ারা বেগম ও মেহেরুন্নেছা বেগম। তাঁদের সংসার আলোকিত করেছেন পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। তিনি ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন আল জাফর চৌধুরী দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম সারির একজন কৃতী ফুটবলার ছিলেন। ১৯৮০ সালে গাছবাড়িয়া পোস্ট অফিস গলিতে ‘চন্দনা’ সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে সংগীত চর্চা ছাড়াও হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। এসময় তার অন্যান্য সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়ব, শীলপাড়ার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী জয়রাজ শীল, কবি ডা. শফি সুমন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, লোকশিল্পী ফরিদ উদ্দীন প্রমুখ।
১৯৬০ সালে উত্তর হাসিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। শুরুর দিকে বিদ্যালয়টি বেড়া দিয়ে তৈরি করে শনের ছাউনি দিয়ে নির্মাণ করা হয়। স্কুলটিতে তখন বাল্যশিক্ষা দেয়া হতো। পরে মাটির তৈরি স্কুল ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি পরিপূর্ণ রূপদান করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে হাসিমপুর ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসব ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ মুক্তযোদ্ধা সংসদ-চন্দনাইশ উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার (সভাপতি), হাশিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি, চন্দনাইশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চন্দনা সাংস্কৃতিক একাডেমির সভাপতি, গাছবাড়িয়া নিত্যানন্দন গৌরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা ও কৃতিত্বের জন্য ২০১৯ সালে খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দারবান সড়কের চন্দনাইশ অংশ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন আল জাফর চৌধুরী সড়ক’ নামে নামকারণ করা হয়।
লেখক : সাংবাদিক সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল