কবিয়াল রমেশ শীল

8

সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল

যে সব গুণীশিল্পী দেশের লোকশিল্পকে উজ্জীবিত করেছেন, শিল্পকে প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে কবিয়াল রমেশ শীল অন্যতম। সেই কবিয়াল সম্রাট রমেশ শীলের আজ (৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার) ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। রমেশ শীল ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে, ১৩৭৩ বঙ্গাব্দের ২৩ চৈত্র চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার গোমদন্ডী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্ডীচরণ শীল। চন্ডীচরণ শীল ছিলেন পেশায় নরসুন্দর ও কবিরাজ। রমেশ শীলের স্কুলজীবন ৪র্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে পিতার মৃত্যুর পর লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায় ও পরিবারের সকল দায়িত্ব আসে তাঁর কাঁধে। তারপর তিনি পিতার পেশাতে গমন করেন। পরবর্তীতে তিনি বার্মার রেঙ্গুন শহরে গমন করেন। সেখানে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে একটি দোকানেরও মালিক হন। কিন্তু স্বদেশের প্রতি ভালবাসার দরুন পাঁচ বছরের মধ্যেই নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে এসে তিনি পূর্বের নরসুন্দর কাজের পাশাপাশি কবিরাজ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কবিরাজি করতে করতেই কবিগানের প্রতি ভীষণ ভাবে অনুরাগী হয়ে উঠেন তিনি। অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত কবিয়াল রমেশ শীল সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। তার গণসঙ্গীত দেশের মানুষদের এই সব সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৫৪ সালে জণগণের ভোটে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং নুরুল আমিনকে পূর্ববাংলার গভর্নর বানানো হয়। এই নুরুল আমীন চট্টগ্রামে এলে জনগণের কাছে লাঞ্চিত হন। এই নিয়ে তিনি বিখাত একটি ব্যাঙ্গাত্মক গান রচনা করেন। লোককবি রমেশ শীল জীবনের শেষ দুই দশকে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানিত হন। তবে তাঁর দীর্ঘ কবিয়াল জীবন, অজস্র রচনা, সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য সেটি নিতান্তই অপ্রতুল। কয়েক বছর আগে দারুল ইরফান রিচার্স ইনস্টিটিউট (উওজও) কর্তৃক সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী গোল্ড মেডেল (মরণোত্তর প্রদান করা হয়। ১৯৫৮ সালের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সহবন্দীদের আয়োজনে জন্মদিনের সংবর্ধনা, ১৯৬২ সালের ঢাকার বুলবুল একাডেমি সংবর্ধনা, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের নাগরিক সংবর্ধনা। বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসন সম্মাননা করা হয়। ২০০২ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক দেয়া হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও ছড়াকার