সিয়াম সাধনা ধৈর্যের শিক্ষা দেয়

8

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

আল্লাহর অফুরন্ত দয়ার অপূর্ব নিদর্শন রমজানুল মোবারক। মহিমান্বিত বরকতপূর্ণ এ পবিত্র মাসের প্রথম দশক রহমত অংশ আমাদের থেকে বিদায় নিতে চলেছে।এ মাসের সিয়াম-সাধানার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য যথাযথ অনুধাবন করতে পারলে তবেই মুমিনের জীবন স্বার্থক। সিয়াম-সাধনার অন্যতম অর্জন হচ্ছে সবর বা ধৈর্যের শিক্ষা লাভ। রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন- ‘আস সাওমু নিসফুস সাবরে ওয়াস সাবরু নিসফুল ঈমান’ সওম ধৈর্য বা সহিষ্ণুতার অর্ধেক।রমজানের সিয়াম-সাধনা দেহের ওপর মনের এবং ভোগের ওপর ত্যাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে মানুষের অন্তরকে পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ সুগম করে দেয়। বস্তুত রমজানের সিয়াম-সাধনা মানুষকে ধৈর্য, সংযম ও ত্যাগের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। কেননা রোজাদারের সামনে হাতের নাগালে খাদ্যবস্তু থাকার পরও সেদিকে হাত বাড়ায় না, এটাই ধৈর্য, এ ধৈর্যের শিক্ষা মানুষকে বহু উচ্চ মার্গে আরোহনে সহায়তা দেয়।
ধৈর্যের মহৎগুণেই মানুষ প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি মারামারি, রক্তপাত ইত্যাদি মারাত্মক অপরাধের হাত থেকে বেঁচে থাকে।এভাবেই মুমিন মুসলমান মাসব্যাপী সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য কল্যাণের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। তাইতো রসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন- ‘এ মাস ধৈর্যের। আর ধৈর্যের সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। আর এ মাস হচ্ছে সমবেদনা প্রকাশ ও উপকার সাধনের।’ আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা সাহায্য কামনা কর সবর ও সালাতের মাধ্যমে।
রোজাদারের উচিৎ প্রতিমুহূর্তে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া, কেউ যদি গায়ে পড়ে ঝগড়া বিবাদ করতে চায়, তখন বিনয়ের সাথে ঝগড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হুজুর পাক (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের সাথে যদি কেউ ঝগড়া করে গালি দেয়, তবে তোমারা তাকে বলে দাও, ‘আমি রোজাদার’। রোজা রেখে ঝগড়া, বিবাদ করা, জোর গলায় শোর-চিৎকার করা রোজার মর্মবাণীর পরিপন্থী। এমনিতে ঝগড়া-ফ্যাসাদ অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তদুপরি পবিত্র রমজান মাসের সম্মান রক্ষায় রোজাদারে অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। সবরের শিক্ষায় জীবন অতিবাহিত করতে হবে। মুমিন মুসলমানেরা সারাদিন রোজা আদায় করে স্বীয় নাফ্সের চাহিদার বিরোধীতায় লিপ্ত থাকে। এতে ধৈর্যের মহৎ গুণ তৈরী হয়। প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনে ধৈযের্র বহুবিধ তাৎপর্য রয়েছে। যারা দুনিয়াবি হোক অথবা আখিরাতের উচ্চ আসন আশা করে তাদের জন্য কষ্ট সহ্যের অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। সব সময় আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে যা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ শিখিয়েছেন হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দাও এবং পাগুলো অবিচলিত রাখো আর কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। প্রত্যেক মুসলিম নরনারিকে এ দোয়া জানা চায়। প্রত্যেক পুণ্য কাজের শক্তি দাতা আল্লাহ। মাহে রমজানের সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে অর্জিত এসব মহৎ গুণাবলী সমাজের চারদিকে ছড়িয়ে দেয়াই হচ্ছে রমজানের শিক্ষা। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দিন। আমিন!

লেখক :সহকারী সম্পাদক, মাসিক তরজুমা।