সার্ভার সচল থাকে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘চট্টগ্রামে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন কাস্টমস। দেশের মোট রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ এই কাস্টমস থেকে আয় হয়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষাগারটি নামে মাত্র পরীক্ষাগার। ব্যবসা-বাণিজ্যে সময় ও ব্যয় কমানোর জন্য একটি ল্যাব তৈরি সময়ের দাবি। আর কাস্টমসের মতো একটি জায়গায় ঘন্টার পর ঘন্টা সার্ভার থাকে না। এ কারণে পণ্যের এইচএস কোড নিয়ে ব্যবসায়ীদের নানা জটিলতায় পড়তে হয়। এতে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ ও জরিমানা গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের। এছাড়া মাত্র ৪৮ শতাংশ লোকবল দিয়ে চলছে শীর্ষ রাজস্ব আদায়ের প্রতিষ্ঠানটি’।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে স্টেকহোল্ডাররা এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, কাস্টমসে অটোমেশন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সার্ভারের কারণে সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা গুণতে হয়। তাই সার্ভার সার্বক্ষণিক সচল রাখতে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে। আর কাস্টমস হাউজের ল্যাবের আধুনিকায়ন জরুরি। এসময় তিনি শুল্কায়নে সময় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করার আহবান জানান।
মাহবুবুল আলম বলেন, আমি বলবো না সব ব্যবসায়ী কিন্তু সৎ। তবে ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে চায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার ফাইজুর রহমান। দিবসটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান।
এতে বলা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যার মধ্যে কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায় হয় ৮৯ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আদায়কৃত মোট রাজস্বের প্রায় ৩০ শতাংশ।
এছাড়া ২০২২-২০২৩ চলমান অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর মধ্যে কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। দেশে মোট রাজস্ব আয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অংশ এখন প্রায় ৮৫ শতাংশ। ২০ বছর আগে ২০০২-০৩ অর্থবছরে দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ছিলো ২৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। যা গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। যা প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ গুণ।
এতে আরও বলা হয়, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে দেশে ৫১২ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে কাস্টমস। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। দেশের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দরসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে চোরাচালান প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করে এসব স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস।
একেএম মাহবুবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সবার আগে প্রয়োজন স্মার্ট জনবল। ভবিষ্যৎ কাস্টমসকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারস্পরিক জ্ঞান বিতরণ এবং উত্তম পেশাদারিত্ব অর্জনই আগামির প্রত্যয় বলে জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে চট্টগ্রাম কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বলেন, এই সময়ে সার্ভার সমস্যা একধরনের হতাশার কথা। সময়ক্ষেপন বিষয়টি চিহ্নিত করা না হলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সেই সঙ্গে কম খরচে বেশি আয় এই বিষয়টি খুব বেশি আলোচনায় না আসার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
সিঅ্যান্ডএফ সংগঠনগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আখতার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে সকাল থেকেই সার্ভার থাকে না। একারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিলম্ব ও হয়রানি সৃষ্টি হয়। জরিমানার কবলে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। আর নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করা দরকার। নামে মাত্র রাসায়নিক পরীক্ষাগারটি আধুনিকায়ন জরুরি।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ট্যাকসেস আপীলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য সফিনা জাহান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবেদা মোস্তফা, সিএন্ডএফ এর সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু), শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ আরিফ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)’র সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে কাস্টমসের বিভিন্ন সেকশনের কর্মকর্তা, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধি এবং স্টোকহোল্ডারা উপস্থিত ছিলেন।