সাবাস জীবন শাহজালালকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার

15

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০১৮ সালে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১০৮তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন চকরিয়ার জীবন বলী। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালেই ১০৯তম আসরে শিরোপা হারিয়েছিলেন কুমিল্লার শাহজালাল বলীর কাছে। হতাশ জীবন বলী শপথ নিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করবেন। করোনার থাবায় মাঝের দু’বছর খেলাই হয়নি। তবে এবার অর্থাৎ ২০২২ সালে হবেনা হবেনা করেও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকটা নিয়ন্ত্রিতভাবে হলেও ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা আবার মাঠে গড়ায়। সুযোগ পেয়ে চকরিয়ার জীবন বলী তার কথা রাখার কাজটাও সেরে ফেলেন। সেই কুমিল্লার শাহজালাল বলীকেই হারিয়ে শুধু প্রতিশোধই নেননি, চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধারও করেছেন। গতকাল সোমবার বিকালে ফাইনালের শুরু থেকে দর্শকরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে জীবন ও শাহজালালের পক্ষে ¯েøাগান দিতে থাকেন। প্রায় ২৭ মিনিট ধরে চলা নাটকীয় ফাইনালে দুই প্রতিদ্বন্ধী শাহজালাল ও জীবন কেউই জয় নির্ধারক প্রতিপক্ষের পিঠ মাটিতে লাগাতে পারেননি। তবে পয়েন্টের হিসেবে ৩:০ ব্যবধানে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনকে জয়ী ঘোষণা করেন বর্ষীয়ান রেফারি আবদুল মালেক। আবার চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে ভীষণ খুশি জীবন বলী।
উল্লেখ্য, আগের আসরে অর্থাৎ ২০১৯ সালেও কেউ কারো পিঠ মাটিতে লাগাতে পারেননি। পয়েন্টের ভিত্তিতে ৩:১ ব্যবধানে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল শাহাজালালকে।
সংস্কার কাজের কারণে ঐতিহ্যবাহী লালদিঘি মাঠ উন্মুক্ত না হওয়ায় গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় লালদিঘি সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে এবারের বলীখেলা শুরু হয়। খেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, শামসুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম, কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এবারের বলীখেলায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার ৭২ জন বলী অংশ নেন। প্রতিপক্ষকে হারিয়ে চমক দেখান পতেঙ্গা থানার পূর্ব কাঠগড়ের ৭০ বছর বয়সী খাজা আহম্মেদ।
আসরের চ্যাম্পিয়ন বলী সম্মানি হিসেবে পান ট্রফিসহ নগদ ২৫ হাজার টাকা, রানার্সআপ পান ট্রফিসহ নগদ ১৫ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী বলী পান নগদ ৬ হাজার টাকা এবং চতুর্থ স্থান অর্জনকারী বলী পান নগদ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রথম রাউন্ডে জয়ী ৪০ জনকে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
বিজয়ী বলীদের হাতে ট্রফি ও প্রাইজমানি তুলে দেন এবারের আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের তরুণ-যুবকদের শারীরিক ও মানসিককভাবে উদ্বুদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার এ বলী খেলার প্রচলন করেন। বর্তমানে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী উৎসবে পরিণত হয়েছে জব্বারের বলীখেলা। ঐতিহ্য হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বলীখেলা উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী লোকজ মেলাও চলছে লালদিঘির পাড় ঘিরে।